
প্রকাশিত: ২৬ জুন, ২০২৪, ০৭:৪৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
পরীমণি-সাকলায়েন কাণ্ডে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিএমপি-ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ও বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গোলাম সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, যে কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্পদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।
আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ প্রায় ১০০ বছরের ওপরে দায়িত্ব পালন করে আসছে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে আসছি। এক সময় খুলনা অঞ্চল সন্ত্রাসের জনপদ ছিল। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। সেই নীতির আলোকে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। সন্ত্রাস এবং জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ভিন্নমুখী পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। সব সময় থানার দরজা খোলা থাকে। মানুষের সমস্যা শোনার জন্য আমরা প্রস্তত থাকি। সব ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা প্রস্তুত আছি।
পুলিশের আইজি বলেন, সুন্দরবন কখনো শান্ত ছিল না, দস্যুদের অভয়ারণ্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছেন। এক সময় খুলনার জনপদ সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় আমরা সেই সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছি। খুলনা এখন শান্তির নগরী। বাংলাদেশ পুলিশ এদেশের মানুষের সেবা দিয়ে গর্বিত হতে চায়। এবার আমরা স্লোগান দিয়েছি ‘দেশ সেবাই আমাদের আনন্দ, সেবাই আমাদের উৎসব’।
এর আগে, আইজিপি পুলিশ লাইনে ৪ তলা অস্ত্রাগার ভবন, ৬ তলা মাল্টিপারপাস ভবন ও বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়া বড় বয়রা পুলিশ ফাঁড়ি ও মাল্টিপারপাস শেড উদ্বোধন করেন। পরে পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন আইজিপি। এ সময় কেএমপির পুলিশ কমিশনার মোজাম্মেল হক, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হকসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ছিলেন আজিজ আহমেদ। এর আগে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) প্রধান ছিলেন তিনি। সম্প্রতি দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২১ মে আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে সাকলায়েনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের পরামর্শ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার উপসচিব রোকেয়া পারভীন জুঁই স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সাকলায়েন ধারাবাহিকভাবে পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় সাকলায়েন অবস্থান করেছেন বলে মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে প্রমাণ পাওয়া যায়।
এতে বলা হয়, এ দুজনের যোগাযোগ সাধারণ কিংবা পেশাগত কারণে নয় বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক। এ ছাড়া পরীমনি ও সাকলায়েনের যোগাযোগ এবং তাদের এই সম্পর্কের ব্যাপারে আরও উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ও মেসেজও আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিধি অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গুরুদণ্ড হিসেবে সাকলায়েনকে চাকরি থেকে ‘বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান’ দণ্ডের বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
পরীকাণ্ডে আলোচনা শুরুর পর প্রথমে সাকলায়েনকে ডিবি থেকে সরিয়ে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) সংযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে ঝিনাইদহ ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারে বদলি করা হয়।
বিসিএস পুলিশ ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তা সাকলায়েন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন। অনার্স শেষ করেই বিসিএসে উত্তীর্ণ হন তিনি। ৩০তম ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন সাকলায়েন।
মন্তব্য করুন