পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৯ জুন, ২০২৪, ০৫:২৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

পাকুন্দিয়ায় ৪০০ বছরে পুরাতন শাহ মাহমুদ মসজিদ

পাকুন্দিয়ায় ৪০০ বছরে পুরাতন শাহ মাহমুদ মসজিদ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

হাওর বেষ্টিত ভাটি বাংলার একটি জনপদ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়ন। এখানেই অবস্থিত শেখ শাহ মাহমুদ মসজিদ। এই মসজিদটি প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের পুরোনো। যা অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর এক অনুপম নিদর্শন। এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে সুবেদার শায়েস্তা খাঁর আমলে।

জনশ্রুতি রয়েছে, মসজিদটি নির্মাণ করেছেন তৎকালীন এগারসিন্দুরের প্রখ্যাত ধনাঢ্য বণিক শেখ মাহমুদ। মুঘল আমলের শিল্পরীতি ও স্থানীয় শিল্পরীতির সমন্বয়ে নিপুণ কারিগরের দক্ষতায় নির্মিত মসজিদটি এখনও নান্দনিক অপূর্ব সৌন্দর্যের হাতছানি দেয় পর্যটকদের।

এগারসিন্দুর গ্রামটির রয়েছে বিশাল এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য। বারো ভূঁইয়ার প্রধান বীর ঈশা খাঁর দুর্গ ছিল এখানে। ঈশা খাঁ ও মুঘল সেনাপতি মানসিংহের মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধও হয়েছিল দুর্গ-সংলগ্ন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে।

বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় লাল মাটির এ অঞ্চলটি প্রাচীনতম। তার নিদর্শনও রয়েছে। এগারসিন্দুর গ্রামে একাধিক প্রাচীন সমাধি রয়েছে। এই গ্রামের কাছাকাছি দুটি প্রাচীন মসজিদের মধ্যে স্থাপত্যশৈলীর একটি হলো শাহ মাহমুদ মসজিদ। এর সৌন্দর্য ও তাৎপর্য ভিন্নমাত্রার দাবিদার, মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন। মসজিদের পথেই রয়েছে জোড় প্যাটার্নের বাংলো।

স্থানীয়রা জানান, মসজিদের চার কোনায় চারটি মূল্যবান প্রস্তরফলক ছিল, যা বর্তমানে নেই। কে বা কারা এগুলো সরিয়ে নিয়েছে। মুঘল আমলের চারটি প্রাচীন মসজিদ রয়েছে পাকুন্দিয়ায়। তার দুটিই অবস্থিত এগারসিন্দুর গ্রামে। অপর মসজিদটির নাম শেখ সাদী মসজিদ। যা শাহ মাহমুদ মসজিদ থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরে অবস্থিত।

ঐতিহাসিক নানা কারণে এগারসিন্দুর অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এখানে এগারসিন্দুর দুর্গের ধ্বংসস্তূপ এখনও কালের সাক্ষী হয়ে আছে।

বেবুদ রাজার ঐতিহাসিক পুকুর দেখতে এখনও প্রতিদিন উৎসুক মানুষ ভিড় করেন। এ মসজিদের পুরাকীর্তি সবার নজর কাড়ে। বর্গাকৃতি মসজিদের প্রতি বাহুর দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের চার কোনায় আট কোনাকৃতির বুরুজ রয়েছে। এতে বহুগুণ বেড়েছে মসজিদের সৌন্দর্য। পূর্ব দেয়ালে তিনটি দরজা (প্রবেশপথ) রয়েছে। তার মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত একটু বড়। উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে একটি করে দরজা (প্রবেশ পথ)। ঝাজদি নকশায় অন্ধকুলঙ্গির পোড়ামাটির চিত্রফলক মসজিদের ভেতর ও বাইরের সৌন্দর্যকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। পূর্ব দিকে রয়েছে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণের পূর্ব দিকের ঠিক মাঝে রয়েছে জোড় বাংলো প্যাটার্নে নির্মিত বালাখানা। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মাহমুদের উত্তরসূরিরা এখনো বসবাস করেছেন এই মসজিদের পাশেই।

মন্তব্য করুন