
প্রকাশিত: ৯ জুলাই, ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
এনজিও থেকে ঋণ এবং ধার-দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকা থেকে দিনদুপুরে একই পরিবারের দুই যমজ পুত্রসহ সাতজন রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে তারা আত্মগোপনে ছিল। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, আয় রোজগার নিয়ে পরিবারে কলহ এবং মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ওই সাতজন রাঙামাটি জেলায় গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে দুইজন কাজের সন্ধান করছিলেন।
মঙ্গলবার বগুড়ার পিবিআই কার্যালয়ে ইন্সপেক্টর জাহিদ হোসেন মন্ডল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সোমবার রাঙামাটি সদর উপজেলার চেয়ারম্যানপাড়া এলাকা থেকে সাতজনকে উদ্ধার করা হয়। রাঙামাটিতে কাজকর্ম করে সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে বসবাস করাই ছিল তাদের মূল পরিকল্পনা।
উদ্ধার সাতজন হলেন- ফাতেমা বেগম (৫০), তার ছেলে বিক্রম আলী (১৩), ছোট কন্যা রুনা খাতুন (১৭), বড় কন্যা রুমি বেগম (৩০), তার সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা বৃষ্টি খাতুন (১৩), দুই যমজ পুত্র হাসান (৬) এবং হোসেন (৬)। ১০ বছর ধরে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকায়
ভাড়া বাড়িতে তারা বসবাস করে। সেখান থেকে গত ৩ জুলাই কাউকে কিছু না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হয়।
পিবিআই ইন্সপেক্টর জাহিদ হোসেন জানান, ফাতেমা ও রুমি বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পারিবারিক কলহের কথা জানিয়েছে। তাদের স্বামী বিভিন্ন সময়ে আয় রোজগার নিয়ে কটু কথা শোনাতো। তাদেরকে স্বাবলম্বী হতেও দিত না। মাঝেমধ্যেই মানসিক নির্যাতন করতো। এ কারণে তারা পরিকল্পনা করে নিজেরা আয় রোজগার করে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য কাউকে কিছু না জানিয়ে রাঙামাটি জেলার বুড়িরহাট এলাকায় ফাতেমার নানার বাড়িতে পালিয়ে যায়। সেখান থেকেই কাজের সন্ধান করছিলেন।
পিবিআই জানায়, ফাতেমার পরিবার দরিদ্র। ফাতেমা আগে অনেকবার রাঙামাটিতে গিয়েছিল। সেখানে অনেকের কাজের ব্যবস্থাও করেছিল। সেখানকার পথঘাট তার পরিচিত ছিল। রাঙামাটি যাওয়ার পর লালমনিরহাটে একবার গিয়েছিল ফাতেমা। কিন্ত স্বামীর নির্যাতনের কারণে তারা কোথায় আছে সেটি গোপন রাখে।
এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে ফাতেমা তার পরিবারের ৭ সদস্যকে নিয়ে আত্মগোপন করে বলে জানিয়েছিলেন নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) তারিকুল ইসলাম। গত সোমবার তিনি স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, ফাতেমা
একাধিক এনজিও থেকে বেশ কিছু টাকা ঋণ নেয়। ঋণ পরিশোধের জন্য ফাতেমাকে চাপ দিচ্ছিল এনজিও কর্মকর্তারা। যথাসময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ফাতেমা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মগোপন করে। ফাতেমা বেগম নারুলী ফাঁড়িতে গৃহ পরিচারিকা হিসেবে কাজ করে। তার মায়ের বাড়ি লালমনিরহাটের খোঁচাবাড়ি এলাকায়। নিখোঁজ হওয়ার আগে ফাতেমা বলেছিল মায়ের বাড়িতে সে কিছু জমি পেয়েছে। বুঝে নিতে তাকে সেখানে যেতে হবে। এজন্য পুলিশ ফাঁড়ি থেকে গত ২ জুন ছুটি নেয়। সাতজন নিখোঁজের পর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সবাই পরনের কাপড়চোপড় ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে যায়নি। একমাস আগে এক ব্যক্তি দুই নারীকে ভালো চাকরির প্রলোভন দিয়েছে। নিখোঁজ সাতজন মানবপাচারের শিকার হতে পারেন বলে শঙ্কায় ছিল পরিবার।
মন্তব্য করুন