মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই, ২০২৪, ০৯:৩৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

রাজউককে বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নতুন চেয়ারম্যানের

রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ড. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) বদলে দেওয়া এবং সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি বন্ধের অঙ্গীকারে কাজ শুরু করেছেন নতুন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। গত ৪ এপ্রিল দু’বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে ৮ এপ্রিল তিনি যোগ দেন। তিনিই প্রথম সামরিক কর্মকর্তা যিনি রাজউক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেলেন।  

যোগ দিয়েই তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এরপর কাজ শুরু করেন। তিনি পুরোনো কর্মকর্তাদের বদলিয়ে নতুন চৌকশ কর্মকর্তাদের নিয়ে রাজউককে বদলে দেওয়ার কাজ শুরু করেন। দৃঢ়তার সঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান জানালেন, রাজউককে তিনি একটি স্বচ্ছ, জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাবেন। ছিদ্দিকুর রহমান সরকার ১৯৬৩ সালের ১০ আগস্ট নরসিংদী জেলার শিবপুরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

রূপালী বাংলাদেশকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। বিশেষ সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন মাইনুল হক ভূঁইয়া।

এখানে তা তুলে ধরা হলো-

রূপালী বাংলাদেশ: যোগদানের পর টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পু®পার্ঘ নিবেদন করে আপনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকাকে আটটি জোনে ভাগ করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হচ্ছে। আপনার এ ঘোষণার বাস্তবায়ন কতদূর এগুলো?

রাজউক চেয়ারম্যান: এ প্ল্যানটি আগে থেকেই করা ছিল যে, ঢাকাকে আটটি জোনে ভাগ করা হবে। নতুন গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হওয়ার পর এটাকে নতুন করে রিভাইস করতে হয়েছে। বর্তমানে আটটি জোনের মধ্যে ছয়টি জোন তাদের নিজস্ব ভবনে চলে গেছে। বাকি দুটি আছে। এ দুটিও ভবিষ্যতে চলে যাবে। আমরা আমাদের প্ল্যান মোতাবেকই এগিয়ে যাচ্ছি।

রূপালী বাংলাদেশ: রাজউকের কর্মপরিকল্পনার কোন কোন বিষয়গুলো আপনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন?

রাজউক চেয়ারম্যান: ঢাকা এবং ঢাকার ভেতরে কিছু প্রত্যন্ত এলাকায় বিশেষ করে সাভার, বছিলা ও নারায়ণগঞ্জে কিছু অবৈধ ভবন হয়ে গেছে। প্রত্যেকেরই আমাদের কিছু থাকে ভায়োলেসন করার। বিশেষ করে রাস্তার উপর ভবন চলে আসা। ভবনগুলো শুরু হয় ভালোভাবেই কিন্তু পরে উপরের দিকে এক্সপান্ড করে ফেলেন। বিষয়গুলো আমরা জোর দিয়ে চাচ্ছি যাতে আমাদের ঢাকাবাসীর যেসব বিল্ডিংগুলো হবে। প্ল্যান মোতাবেকই হবে এবং রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। যেন কোনোরকম ভায়োলেসন না হয়- সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। আমাদের যারা মাঠে কাজ করছেন সবাই এদিকে অনেক দৃষ্টি রাখছেন। আশা করছি ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও উন্নতি হবে।

রূপালী বাংলাদেশ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

রাজউক চেয়ারম্যান: আমাদের কর্মপরিকল্পনা হলো রাজউককে আমাদের গতিশীল করতে হবে। সেবাপ্রার্থীদের যেন আমরা স্বল্প সময়ে সেবা দিতে পারিÑ সেটি প্ল্যান অনুমোদনই হোক অথবা অন্য কমপ্লেইন যেগুলো আছেÑ প্রতিবেশীদের অনেক কমপ্লেইন থাকে এবং আমাদের যেসব সার্ভিস দেওয়ার থাকে প্লট রাজউকের পক্ষ থেকে বরাদ্দ বলি, ফ্ল্যাট যেগুলো করেছি- আমাদের অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আছে এবং ঢাকাবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্ল্যান মোতাবেক আমরা প্রায় ৭০টির মতো নতুন পুকুর সংস্কার করছি, ঢাকা শহরে বড় বড় লেক করছি যাতে করে হাতিরঝিলের মতো বড় বড় ব্রিদিং স্পেশ থাকেÑ ফুসফুস করা যায় এতে পরিবেশ সুন্দর হয়। বড় বড় খেলার মাঠ আমরা তৈরি করছি। রাজউকে জনবল সংকট ছিল। এ মাসেই আমরা ৯০ জন নতুন অফিসার আমরা নিয়েছি, যাতে করে সেবাটা আমরা তাড়াতাড়ি দিতে পারি। সার্বিকভাবে রাজউকের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব যেন আমরা সঠিকভাবে পালন করতে পারিÑ সে ব্যাপারে আমরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি।

রূপালী বাংলাদেশ: ড্যাপ নিয়ে মানুষের মাঝে ধোঁয়াশা আছে। আসলে ড্যাপ কী, ড্যাপ নাগরিকদের কী সুবিধা দিচ্ছে?

রাজউক চেয়ারম্যান: আমি বলব, ড্যাপ ঢাকা শহরের একটা মাস্টার প্ল্যান। আমাদের মেট্রোপলিটন যে এলাকা আছে তাতে কোথায় জলাধার থাকবে, কোথায় শিল্পাঞ্চল হবে, কোথায় আবাসিক এলাকা হবে, কোথায় মার্কেট হবেÑ এই মাস্টার প্ল্যানটিই মূলত ড্যাপ করা হয়েছে। আসলে ড্যাপ নিয়ে অনেকের অনেক বিভ্রান্তি আছে। আমি বলব, ড্যাপ নামের এই মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে যেতে পারি তাহলে জনগণের যে ভোগান্তিÑ অনেক গরম পড়ছে টেম্পারেচার বেড়ে গেছেÑ আমাদের যে নাগরিক সুবিধাসমূহ তা যদি সঠিক করতে চাই, সুন্দর ঢাকা শহর গড়তে চাই, স্মার্ট শহর গড়তে চাইÑ তাহলে ড্যাপের কোনো বিকল্প নেই। আমি আরও বলতে চাই, ড্যাপ সব মন্ত্রণালয়, সব পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যারা ড্যাপের সাথে যুক্ত ছিলেনÑ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শীর্ষ মহল থেকে এটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমরা ড্যাপের মাধ্যমেই সমস্ত প্ল্যান করছি। কাজ করছি, আশা করি, ড্যাপ অনুযায়ী যদি কাজ করতে পারি, ঢাকাবাসীর ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর হবে, উজ্জ্বল হবে।

রূপালী বাংলাদেশ: নতুন ড্যাপে যোগ হয়েছে ‘ফ্লোর  এরিয়া রেশিও (ফোর)। এতে করে ফ্ল্যাট নির্মাণ ও বিক্রিতে ভাটা পড়েছে এমন একটি সংবাদ রূপালী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন কাগজে ছাপা হয়েছে।

রাজউক চেয়ারম্যান: এফএআর যেটি ফ্লোর এরিয়া রেশিওÑ সেটি কিন্তু আগেও ছিল। আমাদের ডেভেলপার কোম্পানি যারা রিহ্যাবের সদস্য তাদের বক্তব্য হলো সব জায়গাতেই হাইরাইজ বিল্ডিং করতে চাই। তা যদি হয় তাহলে ঢাকা শহরকে রক্ষা করা যাবে না। এ জন্যই ড্যাপের মধ্যে যে ছাড় আছে কোথায় কতটুকু করা যাবেÑ সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। আগেও যেগুলো ছিল না। তারা চান, জলাধার যেখানে আছে সেখানে বিল্ডিং করতেÑ তাহলে তো ঢাকা শহরকে বাঁচানো যাবে না। তাই ড্যাপের মধ্যে যে ফারক আছে কোথায় কতটুকু আছে সে অনুযায়ী প্ল্যান করা হয়ে গেছে। সে অনুযায়ী আমরা অনুমোদন দিচ্ছি। সে জন্য আমি বলব, যাদের ড্যাপ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান নেই কিংবা পড়েননি তারা যদি একটু পর্যালোচনা করেন তাহলে ড্যাপের পক্ষেই কথা বলতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য একটাই, নাগরিক সুবিধা সম্বলিত সুন্দর ও স্মার্ট একটি ঢাকা শহর গড়া। সে লক্ষ্যেই কিন্তু ড্যাপ তৈরি করা হয়েছে। এ বিষয়ে কারও যদি কোনোরকম সংশয় থাকে তারা আমাদের কাছে আসতে পারেন। আমরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠনের সাথে মতবিনিময় করে এ বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার করে দিয়েছি। আশা করি, তাদের ধ্যান-ধারণা বদলাবে এবং সুন্দর ঢাকা শহর গড়ার লক্ষ্যে তারা কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন।

রূপালী বাংলাদেশ: রাজউকের বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল অতীতে। এ সম্পর্কে আপনার অবস্থান কী হবে।

রাজউক চেয়ারম্যান: প্লট বরাদ্দে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে এবং সময়ে সময়ে তা পরিবর্তিত হয়। রাজউক সবসময় নিয়মের মধ্যে থেকেই এগুলো বরাদ্দ করে থাকে। এখানে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত প্লট ছিল। এই ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী পঞ্চম পর্যায়েও প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। এরপরও কিছু কিছু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তাদের বিষয়টি সুবিবেচনায় নিয়ে সময়ে সময়ে ডিসি অফিস ও রাজউকÑ সবাই মিলে পর্যালোচনা করে প্লটগুলো আবার বরাদ্দ দিচ্ছি। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।  তবে হ্যাঁ, গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্লট কেনা-বেচায় হয়তো কিছু অনিয়ম হয় কিন্তু প্লট বরাদ্দে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না। সুতরাং এ ধরনের অনিয়মের কোনো নজির আমি দেখিনি। আমার সময়ে তো প্লট খুবই কম বরাদ্দ দিয়ে অনিয়ম করার সুযোগ আমি দেখি না। আশা করি, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে যদি কারও কোনো সমস্যা থাকে কিংবা অভিযোগ থাকে, তারা আমাদের কাছে আসতে পারেন, আবেদন করতে পারেন। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে এর ফয়সালা আমরা সুন্দরভাবে করে দেব ইনশাআল্লাহ।

রূপালী বাংলাদেশ: প্ল্যান পাসসহ নানা সেবাপ্রাপ্তিতে নাগরিকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেনÑ বিষয়টি আপনি কীভাবে অ্যাড্রেস করবেন?

রাজউক চেয়ারম্যান: হয়রানির বিষয়টি আমি অস্বীকার করব না। হয়রানি হয়তো হতে পারেন কিন্তু হয়রানিটা তখনই হন যখন সেবাগ্রহীতা আসেন এবং তাদের ইচ্ছে মাফিক বেশি ‘ফার’ নেওয়ার চেষ্টা করেন। আমরা যে প্ল্যান পাস করি, আমাদের কিছু অসাধু ব্যক্তিবর্গ আছেন, দালালচক্র আছে। তারা আমাদের প্ল্যানটাকে পরিবর্তন করে বড় করার চেষ্টা করেন। যখন তাদের মনমতো পাচ্ছে না তখনই তারা অভিযোগ করে বসেন যে, হয়রানি করা হচ্ছে। আমি মনে করি, প্রত্যেকের এখন বোঝা উচিত যে, ঢাকা শহরের জন্য আমাদের প্রত্যেকের কিন্তু কাজ করতে হবে। যার যতটুকু বরাদ্দ সেই সীমার মধ্যে থেকে যদি কেউ কোনো প্ল্যান নিয়ে আসেন, যদি বিলম্ব ঘটেÑ আমরা বলেছি, যদি কোনো প্ল্যান নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকে, যদি এক মাসেও না হয়, আমার কাছে আসতে পারেন। এর সুষ্ঠু সমাধান আমরা দেব। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখানে হয়রানি আগে যদি হয়ে থাকে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমি যতদূর জানি, বর্তমান সময়ে যদি কোনো হয়রানি হয়ে থাকে আমাদের মেম্বার সাহেবরা আছেন, পরিচালকরা আছেন তারা কাজ করছেন সে লক্ষ্যে। সব যদি ব্যর্থ হয়, আমার অফিস পর্যন্ত তারা আসতে পারেন। আমরা সুষ্ঠু সমাধান দেব এবং ত্বরিৎগতিতে প্ল্যান পাস করে দেব। সব শেষে তিনি রূপালী বাংলাদেশের মঙ্গল ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।

 

মন্তব্য করুন