
প্রকাশিত: ১৭ জুলাই, ২০২৪, ০৫:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
দক্ষ ব্যবস্থাপক ও দেশের শিল্পায়নের উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব দেশে প্রকট। আর এ কারণেই দেশে ক্রমবর্ধমানভাবে বিদেশি কর্মজীবীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশিদের দক্ষতা এবং অতীত রেকর্ডের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কারণ তারা শিল্প উন্নয়নে ভালো অবদান রাখতে পারেন। প্রতিবছর বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী বিদেশি নাগরিকদের আবেদনের সংখ্যাও বাড়ছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১০১টি দেশের নাগরিকের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছে। আবেদনের মধ্যে ১৬ হাজার ৩০৩টি আবেদনের অনুমোদন দিয়েছে বিডা। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মধ্যে ৬ হাজার ২৫৬টি নতুন ওয়ার্ক পারমিট। ১০ হাজার ৪৭টি নবায়ন করা হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরে ১০৬টি দেশের ১৫ হাজার ১২৮ জন আবেদনকারী এই অনুমতি পেয়েছিলেন। যা তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮৭ শতাংশ বেশি ছিল। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৯০টি নতুন ওয়ার্ক পারমিট এবং ৭ হাজার ৩৩৮টি নবায়নের অনুমোদন ছিল। তার আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ হাজার ৭৬টি আবেদনের অনুমোদন দিয়েছিল বিডা।
এছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), এনজিও বিষয়ক ব্যুরো এবং কিছু মন্ত্রণালয় বিদেশি নাগরিকদের প্রকল্পে কাজ করার অনুমতি দিয়ে থাকে।
২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের ভিতরে কাজ করতে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি বিদেশি নাগরিককে অনুমতি দিয়েছে বেপজা। একই সময়ের মধ্যে বেজা ১ হাজার ৩৫০ জন বিদেশি নাগরিককে অনুমতি দিয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ওয়ার্ক পারমিট পেয়েছেন ভারতের নাগরিকরা ৩ হাজার ১৫৯টি। এরপর চীন (২ হাজার ৩৩৯), শ্রীলঙ্কা (৭৫৯) ও বেলারুশ (৭২৭)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, 'তবে শিল্প খাতে বিদেশি নাগরিকদের ক্রমাগত বৃদ্ধি এটাই প্রমাণ করে যে, স্থানীয় গ্র্যাজুয়েট ও পেশাজীবীরা বিদেশিদের মতো দক্ষ নন।' 'যদিও স্থানীয় পেশাদারদের কম বেতনে নিয়োগ দেওয়া যায়, বিপরীতে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার কারণে বিদেশিদের উচ্চ বেতনের প্রস্তাব দিয়ে নিয়োগ দেন বিনিয়োগকারীরা।'
গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম স্থানীয় জনশক্তির মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি এবং টারশিয়ারি পর্যায়ে মানসম্মত শিক্ষার অভাবকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, 'সরকার শিক্ষার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় দক্ষতা অর্জনের পর দেশ ত্যাগ করে।'
বিডার নির্বাহী সদস্য মহসিনা ইয়াসমিন বলেন, এই উত্থান মোটেই খারাপ কিছু নয়। কারণ বিদেশি পেশাজীবীরা শিল্প খাতের জাতীয় কর্মশক্তির দক্ষতার ঘাটতি পূরণ করছে। তারা বাংলাদেশের আইন মেনে চলছে এবং কর দিচ্ছে। 'দক্ষ টেকনিশিয়ান ও ম্যানেজারিয়াল লেভেলের পদের জন্য গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে থাকি। কারণ তারা আমাদের জনশক্তির জন্য দক্ষতা তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।'
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা ১৩৭ মিলিয়ন ডলার নিজ নিজ দেশে পাঠিয়েছেন। যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন, সঠিক সংখ্যা আরও বেশি হবে। কারণ অন্য দেশের অনেকে বৈধ অনুমতি ছাড়াই এখানে কাজ করছেন।
মন্তব্য করুন