
প্রকাশিত: ১৮ জুলাই, ২০২৪, ০৪:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
কোটা সংস্কারের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ মধ্যে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারী ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এ ঘটনায় ঢাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সকাল থেকেই শিক্ষার্থী-পুলিশসহ দুই শতাধিক আহত হয়েছেন।
আলোচনায় বসছে সরকার
এদিকে, সরকার কোটা সংস্কারের পক্ষে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে আপিল বিভাগে আগামী ৭ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারিত আছে। শুনানির সময় এগিয়ে আনার জন্য আগামী রবিবার আদালতে সরকার পক্ষ আবেদন করবে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন’।
আইনমন্ত্রী দুপুর ২টার দিকে বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখনই আলোচনায় বসতে রাজি হবেন তখন এ আলোচনা হবে।’ তিনি জানান, তাকে ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে রাজপথ
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের জন্য রাজধানী ঢাকার রাজপথের বিভিন্ন পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চরমে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। এতে রাজধানীজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, মতিঝিল, কাকরাইল, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, নতুনবাজার, কুড়িল বিশ্বরোপ, মিরপুর-১০ ও উত্তরায় অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও বাড্ডায় কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবুও রাজপথ ছাড়েনি শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ‘আন্দোলন সহনশীলতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার’
বাড্ডা-রামপুরায় পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে নিহত ১
রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে দুলাল মাতবর নামে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। অন্যদিকে রামপুরা এলাকায় বিকেলে বাংলাদেশ টেলিভিশনের গেট ও ভেতরে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এর আগে সকালের দিকে রামপুরা ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনারের কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয়।
রণক্ষেত্র মিরপুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়া হয়েছে। দুপুর দুইটার কিছু পরে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা লিমা খানম বিষয়টি জানিয়েছেন।
রেললাইন অবরোধ
রাজধানীর মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে সারাদেশের সঙ্গে ঢাকার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকার মহাখালী ও নাখালপাড়া এলাকায় রেলপথ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কমলাপুরের স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘মহাখালী ও নাখালপাড়া এলাকায় ট্রেন চলার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। এতে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।’ গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা।
আরও পড়ুন: রাজধানী জুড়ে আতঙ্ক; পুলিশ-আন্দোলনকারীরা মুখোমুখি
গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়ে ঢামেকে ৩৩ জন
রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩৩ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছে।বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আনা হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকে আহত, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারকে গুলি
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে চলছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকা। এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে সকাল থেকেই ব্যাপক মারমুখী অবস্থানে ছিল পুলিশ। শিক্ষার্থীদের ওপর নিক্ষেপ করা পুলিশের গুলি-টিয়ারশেলে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এমনকি আহত শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স চালককেও গুলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আজ বেলা সাড়ে ১০টায় শিক্ষার্থীরা বাড্ডা-রামপুরার রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এরপর ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে।
মন্তব্য করুন