নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৫ জুলাই, ২০২৪, ০৫:৪৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

পুলিশের উপর হামলা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা আটক

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা আটক। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মোহনপুরে কারফিউ চলাকালে মোহনপুর থানায় কর্মরত নারী পুলিশ সদস্য শান্তনা মহন্তের উপর হামলা ও মারধোর ঘটনায় নব- নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বেগমকে আটক করেছে মোহনপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম এরশাদ আলীর নেতৃত্বে থানার ওসি হরিদাস মন্ডল ও অফিসার ফোর্সের সহায়তায় হাবিবাকে উপজেলা জামে মসজিদের সামনে থেকে আটক করা হয়েছে।  

থানা পুলিশ এ ঘটনাসুত্রে জানা গেছে, মোহনপুর থানার নারী পুলিশ কনস্টেবল শান্তনা মহন্তকে ২২ জুলাই (সোমবার) রাতে থানা সদর বাকশিমইল বাজারে মারধোর করেন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বেগম। আহত শান্তনা মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হামলার শিকার নারী কনস্টেবল শান্তনা মহন্ত বলেন, চিকিৎসা শেষে তিনি অসুস্থ কনস্টেবল সাথী রাণী শিলকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। এসময় মোহনপুর বাকশিমইল বাজারে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবার সাথে তাদের দেখা হয়। সাথী রাণী শিলের হাতে ক্যানোলা পরা দেখে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বলেন, তার কি হয়েছে। তারা বিষয়টি এড়িয়ে চলে আসার চেষ্টা করলে হাবিবা প্রথমে তাদের ও পরে থানা ওসি'র চরিত্র হনন করে গালাগাল শুরু করেন। শান্তনা দাবি করেন, ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বলেন, এখানে চাকুরী করতে হলে আমার কথা মত চলতে হবে। না হলে এলাকার পোলাপান খুবই খারাপ তোদের সাইজ করবে। তোদেরকে আমি আমার বাসার চাকর বানাবো। তোদের ওসি খারাপ লোক। সে আমার কথামত কাজ করেনা। তাকেও দেখে নিব। কনস্টেবল শান্তনা মহন্ত তার কথাগুলি মোবাইলে রেকর্ড করতে গেলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বেগম তার উপর হামলা করে তাকে বিবস্ত্র করতে না পেরে মারধর করে এবং তার বাম হাতের বাহুতে কামড় দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।  

মারধরের খবর পেয়ে থানার ওসি হরিদাস মন্ডলকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম এরশাদ আলী।

সম্প্রতি ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বাকশিমইল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মোকলেস ও খালেদা খাতুনকে জনসম্মুখে লাঞ্ছিত করেন। 

এবিষয়ে মোহনপুর থানা কর্মকর্তা ওসি হরিদাস মন্ডল জানান, পুলিশ সদস্যকে মারধোর ঘটনায় থানায় মামলা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম এরশাদ আলী স্যারের নেতৃত্বে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বেগমকে আটক করা হয়েছে। তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মোহনপুর উপজেলা পরিষদের ব্যাপক আলোচিত নব-নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বেগম। তার বিরুদ্ধে ইউএনও'র বাচ্চা অপহরণ চেষ্টা, পুলিশকে মারধোর, সরকারি কাজে বাঁধা, প্রতারণা, হুমকি ধমকি, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের চরিত্র হননসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তার নামে পুলিশকে মারধোর, সরকারি কাজে বাঁধাদান, প্রতারনাসহ মোট চারটি মামলাও রয়েছে।

তার বিরুদ্ধে মোহনপুর থানার সাবেক এএসআই সোলাইমান ও বর্তমানে থানায় কর্মরত নারী কনস্টেবল দোলা রানীর উপরেও হামলার অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও ২০১২ হতে ২০১৪ সালে মোহনপুর উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালতে হাবিবাকে বিভিন্ন মেয়াদে তিনবার জেল হাজতে যেতে হয় তাকে। হাবিবা'র কারণে ২০১৩ সালে মোহনপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান রাতারাতি অন্যত্র বদলি নিয়ে হাবিবার জাল হতে নিজেকে রক্ষা করেছেন বলেও জানাগেছে।

একের পর এক দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীন কান্ডে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা বেগমের উপর এলাকাবাসি, সচেতন নাগরিক ও জনপ্রতিনিধিরা হতাশ হয়েছেন। তারা বলছেন একজন জনপ্রতিনিধি দ্বারা সংগঠিত ন্যাক্কারজনক ঘটনা রীতিমত ভাবিয়ে তুলেছে উপজেলাবাসিকে। তাকে আটক করায় উপজেলাবাসি পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ হতে হাবিবাকে অপসারণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন উপজেলার সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজ।

 

মন্তব্য করুন