
প্রকাশিত: ৩০ জুলাই, ২০২৪, ০৪:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ছিটমহল বিনিময়ের নবম বর্ষপূর্তি কাল। দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দিজীবন কাটিয়ে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যেরাতে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশের বিলুপ্ত ১১১টি ছিটমহলের ৪১ হাজার নাগরিক। দীর্ঘদিন থেকে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত ছিল। ১৭ হাজার ১৫৮ একর আয়তনের এসব ছিটমহলের অধিবাসীদর জন্য ছিল না কোন নির্দিষ্ট দেশ ও পরিচয়। ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছিলো। রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা তো দুরের কথা নুন্যতম পরিচয়ও চলতে পারেনি তারা। বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় অবশেষে গত ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই স্বাধীনতার স্বাদ পায় ছিটমহলবাসী। ওইদিন মধ্যরাতে মোমবাতি প্রজ্জলন এবং পরদিন (১ আগস্ট) সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তালনের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয় অভিশপ্ত ছিটমহল বাসির বন্দি জীবন। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় লালমনিরহাটের ৫৯ টি, কুড়িগ্রামের ১২টি, নীলফামারীর ৪টি পঞ্চগড়ের ৩৬ টি ছিটমহলের বাসিন্দা।
দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দী দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দেশের অন্যান্য অধিবাসীদের ন্যায় পেতে শুরু করে সুবিধা। গত ৯ বছরে বিলুপ্ত ছিটমহলকে এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর উন্নয়নে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। নির্মাণ করা হয় রাস্তাঘাট, গড়ে তোলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ঘরে ঘরে দেওয়া হয় বিদুৎ সুবিধা। কৃষি উন্নয়নেও পদক্ষেপের কমতি নেই এসব বিলুপ্ত ছিটমহলে। এতে বদলাতে থাকে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবনমান।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের বিলুপ্ত ছিটমহল বাঁশ পচাইয়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ আজিজুল হক বলেন, ছোট বেলা থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জানতাম না আমরা কোন দেশের নাগরিক। ছিলো না জমির মালিকানা, পড়াশোনার সুযোগ। বাংলাদেশের ভূখন্ডের ভিতরে থাকলেও কাটাতে হয়েছে বন্দিজীবন। ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর মিলেছে নাগরিকত্ব, জমির মালিকানা, ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ। সরকার ছিটমহল নির্মাণ করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িবাড়ি দিয়েছে বিদুৎ সংযোগ।
বাশপচাই ভিতর কুটির বাসিন্দা রবিদাস (৪০) বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের সন্তান। ছোটবেলায় শুনছিলাম আমরা ভারতীয়। কিন্তু আমরা ভারতের কোনো সুবিধা, আইনি সহায়তা পেতাম না। বাংলাদেশের ভিতরে ভারতের জমিতে বাড়ি হওয়ায় ছিলো কোনো না দেশেরই নাগরিকত্ব। ফলে ভারত-বাংলাদেশের কোনো সুবিধা পাওয়া যেতো না। এমনকি জমির মালিকানা দাবি, ক্রয়-বিক্রয়ে সৃষ্টি হতো নানা সমস্যা। বর্তমানে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক। দেশের অন্যান্য অধিবাসীরা যেমন জীবনযাপন করে আমরাও তেমন জিবনজাপান করছি। সরকার সকল ধরনের উন্নয়ন এ এলাকায় করেছে।
বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময়ের সমন্নয় কমিটির সদস্য হারুনর রশীদ বলেন, দীর্ঘ ৬৮ বছর অবহেলিত থাকায় ছিটমহল এলাকায় কোনো রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব ছিলো না। ২০১৫ সালের ১ আগষ্টের পর থেকে সকল ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উন্নয়ন হয়েছে। পিছিয়ে থাকা বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশের অন্যান্য নাগরিকের মতই জিবন কাটাচ্ছে। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো সরকারিকরণ করা হয়নি। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১৫ সালে বাশপচাই ভিতরকুটিতে প্রতিষ্ঠিত সালেহা সরকার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়লয়টি এখনো সরকারিকরণ করা হয়নি। এছাড়া বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকায় এখনও রয়েছে বেকারত্ব সমস্যা রয়েছে। সরকারের তত্ত্বাবধানে বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকাগুলোতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, রংপুর বিভাগের ১১১ টি বিলুপ্ত ছিটমহলের উন্নয়নে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিলুপ্ত ছিটমহল এলাকাগুলোর রাস্তাগুলো পাকাকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকা এসব এলাকা মানুষদের এগিয়ে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদুৎসুবিধা সহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন করা হয়েছে। আগামীতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা হবে।
মন্তব্য করুন