রূপালী বিশ্ব

প্রকাশিত: ১৬ জুলাই, ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কোটাবিরোধী আন্দোলনে প্রাণহানির খবর

বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কোটা-বিরোধী আন্দোলনের খবর

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে আন্দোলন চলছে। এই চলমান আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে খবর পরিবেশন করছে।

মঙ্গলবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স চলমান ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে ‘বাংলাদেশে কোটা-বিরোধী সহিংস বিক্ষোভে শিক্ষার্থী নিহত’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কোটাবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ দমাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছেন।

‌‘বাংলাদেশে চাকরি কোটা নিয়ে বিক্ষোভে নিহত ৩’ শিরোনামে প্রতিবেদনে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি চলমান ছাত্র আন্দোলনের বিষয়ে বলেছে, লোভনীয় সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সহিংস সংঘর্ষে বাংলাদেশে কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের এই সংঘর্ষে আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর আগে, সোমবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ সহিংসতায় আরও ৪০০ জনের বেশি আহত হন।

মার্কিন বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে। রাজধানীর ঢাকার কাছের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতভর সহিংসতায় কয়েক ডজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।

বাংলাদেশে চাকরির কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে আহত অন্তত ১০০ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের সাথে সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠনের সহিংস সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশের কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটায় অন্তত ১০০ জন আহত হয়েছেন।

আলজাজিরা বলছে, বিক্ষোভকারীরা প্রতিবন্ধী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য ৬ শতাংশ কোটা সমর্থন করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের কোটার বিরোধিতা করছেন। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট গত সপ্তাহে হাইকোর্টের আদেশ চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি আন্দোলনকারীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, এই বিষয়ে চার সপ্তাহ পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিষয়টি শীর্ষ আদালতের হাতে রয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এর প্রতিবাদে দেশজুড়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী মঙ্গলবার রাজপথে বিক্ষোভ করছেন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কোটাবিরোধী বিক্ষোভকারীরা দেশের প্রধান প্রধান মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন।

জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ। বর্তমানে দেশে বেকারত্বের উচ্চহারের মাঝে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে আন্দোলন করছেন।

বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে এই ধরনের কোটা বৈষম্যমূলক এবং মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কেউ কেউ এমনও বলেছেন, বর্তমান কোটা ব্যবস্থাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থনকারী গোষ্ঠীগুলোকে সুবিধা দিচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদের কিছু সদস্য অবশ্য বিক্ষোভকারীদের সমালোচনা করে বলেছেন, আন্দোলনকারীরা সাধারণ ছাত্রদের আবেগ নিয়ে খেলছে।

বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থায় নারী, প্রতিবন্ধী এবং জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরি সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রায় একই ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের ঘটনায় ২০১৮ সালে এই কোটা ব্যবস্থা স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু গত মাসে হাইকোর্ট মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল করার রায় দেন। হাইকোর্টের এই রায়ের পর দেশজুড়ে নতুন করে বিক্ষোভ প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।

এছাড়াও সৌদি আরবের আরব নিউজ, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি নিউজ, ভারতের ইকোনমিক টাইমস ও এনডিটিভি, ব্রিটেনের বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ানসহ বিশ্বের প্রভাবশালী অন্যান্য সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কোটা-বিরোধী আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় খবর।

মন্তব্য করুন