
প্রকাশিত: ২৪ জুন, ২০২৪, ০৯:৫৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে ফের আলোচনায় বাংলাদেশে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান ও তার সহযোগীরা। হামলায় যমুনা টিভির আরব আমিরাত প্রতিনিধি মেহেদী রুবেল আহত হয়েছেন।
শনিবার (২২ জুন) আরব আমিরাতের আজমান ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন হলে চলচ্চিত্র পরিচালক অনন্য মামুনের বাংলা কার্নিভ্যাল অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। তবে আয়োজকরা অনুষ্ঠানের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছিলেন, বাংলা কার্ণিভাল বাংলাদেশীদের আয়োজন। এরসঙ্গে কোন সমালোচিত ব্যাক্তির সম্পর্ক নেই। আর সে (আরাভ খান) এই অনুষ্ঠানে থাকবে না। বেশ জোর দিয়ে এ কথা বলেছিলেন মূল আয়োজক পরিচালক অনন্য মামুন। তবে বিধিবাম শেষ পর্যন্ত সে অনুষ্ঠানস্থলে চলেই আসে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানে আরাভ খানকে ঢুকতে বাঁধা দেয় আয়োজক কমিটি ও নিরাপত্তা কর্মীরা। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এতে উত্তেজিত হয়ে যমুনা টেলিভিশনের আরব আমিরাত প্রতিনিধি মেহেদী রুবেলের ওপর চড়াও হন আরাভ খান ও তার সঙ্গীরা। তাদের হামলায় আহত হন মেহেদী রুবেল। এ সময় আরও বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী লাঞ্ছিত হন। কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয় তাদের ক্যামেরা ও মোবাইলফোন। এক পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও দর্শকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় স্থানীয় একজন আরাভ খানসহ অন্যদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানালে উত্তেজিত হন আরাভ খান। নিজেকে ভারতীয় নাগরিক দাবি করে আরাভ খান বলেন, ‘আমি ভারতীয় নাগরিক। অনুষ্ঠানে আমার অসংখ্য লোকজন। আমাকে ঢুকতে না দিলে সব কিছু পণ্ড করে দেওয়া হবে। একপর্যায়ে পুলিশি সহায়তায় তাকে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
জানা যায়, অনুষ্ঠানে আসার জন্য অনন্য মামুন আরাভ খানের বাসায় গিয়ে তাকে দাওয়াত করেন। আরাভ খান দাওয়াত পেয়ে সবাইকে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহের জন্য ভিডিও বার্তায় অনুরোধ জানান। আরাভ খানের ভিডিও বার্তা পেয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তখন অনন্য মামুন তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন ডেকে অনুষ্ঠানের সঙ্গে আরাভ খানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে উল্লেখ করেন। এতে আরাভ খান ক্ষিপ্ত হয়ে অনন্য মামুনকে ডেকে নিয়ে অনুষ্ঠানে তার যাওয়াটা নিশ্চিত করতে বলেন। একইসঙ্গে গুণীজন হিসেবে তাকে ক্রেস্ট প্রদানের জন্য বলেন। অন্যথায়, অনন্য মামুনকে অনুষ্ঠান করতে বারণ করেন আরাভ খান। তবে আরব আমিরাতের বাংলাদেশ মিশন থেকে বলা হয়েছিল, আরাভ খান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে মিশনের কর্মকর্তারা কেউ সেখানে উপস্থিত থাকবেন না।
বাংলাদেশ মিশনের অভিযোগ, আরাভ খানকে দাওয়াত করে মিশনের কাছে এ তথ্য গোপন রাখেন আয়োজকরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে মিশন কর্মকর্তারাসহ উপস্থিত হন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পুত্র, চলচ্চিত্র প্রযোজক আরশাদ আদনান। তাদের উপস্থিতিতে যথারীতি অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানে আরশাদ আদনান ছাড়াও বাংলাদেশ কনস্যুলেট দুবাইয়ের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেনসহ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের কিছু সময় পার হবার পর আরাভ খান ২০ থেকে ৩০ জনের দলবল নিয়ে অনুষ্ঠানে ঢুকতে চাইলে তাকে বাঁধা দেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
এদিকে, এ ঘটনায় বাংলাদেশ কমিউনিটির মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আরাভ খান নিজস্ব বাহিনী দিয়ে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় কমিউনিটির মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীরা বাংলাদেশ মিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানান।
মন্তব্য করুন