
প্রকাশিত: ৬ ঘন্টা আগে, ০৬:১৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
শেরপুর প্রতিনিধি :
শেরপুরের শ্রীবরদীতে ভূয়া বিল ভাউচারে অর্ধকোটি টাকা কৃষি প্রণোদনার উপকরণ ক্রয় দেখানো হয়েছে। ক্রয় কার্যক্রমে মানা হয়নি সরকারি ক্রয়নীতি। যে দোকানের ক্যাশ মেমো ব্যবহার করে বিল করা হয়েছে সেই দোকান থেকে ক্রয় করা হয়নি কোন পণ্য। দোকান মালিক নিজেও জানেনা তার ক্যাশ মেমো ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিল ভাউচার করা হয়েছে।
জানা গেছে, কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে শ্রীবরদী উপজেলায় ৩টি পৃথক বরাদ্দে মোট ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৮৩৮ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। এর মধ্যে রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেঁয়াজ, মুগ, মসুর, খেসারী, ফেলন ও অড়হড় ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার সহায়তার জন্য ২২,৩৪,২১৩ টাকা, রবি মৌসুমে বিনামূল্যে বোরো ধানের বীজ (হাইব্রিড জাত) এর জন্য ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং দেশের মধ্য ও উত্তর অঞ্চলের অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রবি মৌসুমে শাকসবজি ও সরিষা ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি পুনর্বাসনের জন্য ৪৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৬২৫ টাকা। তথ্যমতে সরকারি কোন ক্রয় কার্যক্রম করতে হলে পিপিআর ২০০৬ এর আলোকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন কৃষি প্রণোদনার ক্রয়ে সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ না করে ভূয়া বিল ভাউচারে অর্ধকোটি টাকা উত্তোলন করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখের ২৩৯ নং জিও মুলে রবি মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, শীতকালীন পেঁয়াজ, মুগ, মসুর, খেসারী, ফেলন ও অড়হড় ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার সহায়তার জন্য ২২,৩৪,২১৩ টাকা বরাদ্দ পাওয় যায়। উক্ত বরাদ্দ থেকে মোতালেব বীজ ভান্ডার এন্ড কীটনাশক হাউজ শেরপুর এর এক ক্যাশমেমোতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২ লক্ষ ১৪০ টাকার বিভিন্ন জাতের গমবীজ ক্রয় দেখিয়েছেন। একই বরাদ্দে মোতালেব বীজ ভান্ডার এন্ড কীটনাশক হাউজ শেরপুর এর এক ক্যাশমেমোতে পরিবহন ব্যয় দেখিয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার ২২৮ টাকা। একই অর্থ বছরে ৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে পৃথক আরেক বরাদ্দে বোরো ধানের বীজ (হাইব্রিড জাত) এর জন্য ৪৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন সিডস, লংগরপাড়া, শ্রীবরদী দোকানের এক ক্যাশমেমোতে সরাসরি ৩২ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা ধান বীজ ক্রয় দেখিয়ে উত্তোলন করেছেন। এছাড়া ২০অক্টোবর, ২০২৪ তারিখের ২৮০নং পৃথক আরেক বরাদ্দপত্রে রবি মৌসুমে শাকসবজি ও সরিষা ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি পুনর্বাসনের জন্য ৪৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৬২৫ টাকার বরাদ্দের মধ্যে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চ্যাম্পিয়ন সিডস, লংগরপাড়া, শ্রীবরদী দোকান হতে বিভিন্ন সবজি বীজ ক্রয় বাবদ ১৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।
অভিযোগ রয়েছে, এসকল ক্রয়ের ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি অফিসার সাবরিনা আফরিন সরকারি ক্রয়নীতি অনুসরণ করেননি। তথ্যমতে, ২৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রকল্প কমিটি, ২ লক্ষের উপর থেকে ১০ লক্ষ পর্যন্ত কোটেশন ও ১০ লক্ষ টাকার উর্দ্ধে টেন্ডার আহবান করে ক্রয় করার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া তিনি কীট নাশকের দোকানের ক্যাশমেমোতে দেখিয়েছেন পরিবহন বিল। এমনকি চ্যাম্পিয়ন সিডস, লংগরপাড়া, শ্রীবরদী থেকে তিনি কোন পণ্যও ক্রয় করেননি মর্মে তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে।
এ ব্যাপারে চ্যাম্পিয়ন সিডস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলিমুর রাজি জানান, শ্রীবরদী কৃষি অফিসে তিনি কোন বীজ সরবরাহ করেননি। তার কাছ থেকে ২ টি সাদা ক্যাশমেমো কৃষি অফিসের লোক নিয়ে গেছে।
উপজেলা বীজ ও সার মনিটরিং কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপি আহবায়ক মো. আব্দুর রহিম দুলাল জানান, শ্রীবরদী কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির পণ্য ক্রয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। কাল্পনিক বিল ভাউচারে প্রণোদনার পণ্য ক্রয় দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যেহেতু ক্রয়ে ভূয়া বিল ভাউচার ব্যবহার করা হয়েছে এবং ক্রয়নীতি অনুসরণ করা হয়নি, তাই এখানে দুর্নীতিও হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব সাবরিনা আফরিন জানান, তিনি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয় কার্যক্রম করেছেন। সরকারি ক্রয়নীতি তিনি জানেন না। চ্যাম্পিয়ন সিডস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলিমুর রাজি এর কাছ থেকে পণ্য না কিনে তার প্রতিষ্ঠানের ক্যাশমেমোতে বিল উত্তোলন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চ্যাম্পিয়ন সিডস এর মালিক কেন পণ্য কেনার বিষয়ে অস্বীকার করেছেন তা তিনি জানেন না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জাবের আহমেদ জানান, এ বিষয়ে একটি ক্রয় কমিটি রয়েছে। উক্ত ক্রয় কমিটির আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার। কিভাবে ক্রয় করা হয়েছে সে ক্রয় কমিটিই ভাল বলতে পারবে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
মন্তব্য করুন