
প্রকাশিত: ৮ জুলাই, ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
প্রত্যয় পেনশন স্কিম প্রত্যাহার ও সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। সোমবার (৮ জুলাই) বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন উড়াল সড়কের নিচের রেলপথ অবরোধ করেন তাঁরা।
এদিকে বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের প্রধান ফটকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষকেরা। একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা-কর্মচারীরাও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে দশটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিতে শুরু করে। পরে বেলা সাড়ে এগারোটায় প্যারিস রোড থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন উড়াল সড়কের নিচে রেললাইন অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহী গামী রেল চলাচল প্রায় ৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যায় জন্য ব্যহত হয়। এসময় রেললাইনে অবস্থান কর্মসূচিতে প্রতিবাদী স্লোগানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিবাদী গান ও কবিতা আবৃত্তি করেন আন্দোলনকারীরা। পরে বিকেল তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এবং ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ আসেন ঘটনাস্থলে। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে আজকের মতো আন্দোলন স্থগিত করতে বললে শিক্ষার্থীরা অস্বীকৃতি জানান। তখন প্রক্টর বলেন, 'এতক্ষণ আমরা নিরাপত্তা দিয়েছি। এখন আমরা চলে যাচ্ছি। তোমরা যদি এখনো আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাও তাহলে নিরাপত্তার দায়িত্ব তোমাদের।' পরবর্তীতে বেলা ৪ টার দিকে শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবমুক্ত করেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটে আন্তঃনগর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন হরিয়ানা রেলস্টেশনে, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন সারদাহ রোড রেলস্টেশনে আটকা পড়াসহ মোট চারটি ট্রেনে পাচটি সিডিউল ব্যাহত হয়েছে। রাজশাহী রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম বলেন, 'শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে রেললাইন না ছাড়লে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন তারা।'
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আমানুল্লাহ খান বলেন, আমাদের পুর্বে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজকে আমরা এই অবরোধ করছি। আমরা একদফা দাবিতে নেমে এসেছি। কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে আবার পরিপত্র জারি করতে হবে যাতে কোনো আইনগত জটিলতা না সাথে সেই সাথে শিক্ষার্থীদের দাবিও পূরণ হয়।
কোটা আন্দোলনকে প্রধানমন্ত্রীর অযৌক্তিক আখ্যা দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামীক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও একসময় ছাত্র ছিলেন। তাঁর মতো দায়িত্বশীলের জায়গা থেকে আমাদের এই আন্দোলনকে এভাবে উড়িয়ে দেয়াটা আমরা তাঁর থেকে আশা করি না। যার দিকে তাকিয়ে আমরা এই আন্দোলনটা করছি সে আমাদের আন্দোলনকে এভাবে উড়িয়ে দিবে এটা আমরা কখনো আশা করি না। আমরা এখনো বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী যে কথাটা বলেছেন সেটা হয়তো অন্যভাবে বলেছেন। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি যেন মেনে নেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের প্রায় দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে শিক্ষকদের কর্মসূচিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেন, 'এই যে আমাদের পাশে শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন চলছে পাশাপাশি শিক্ষকদের আন্দোলন চলছে। সরকার শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত নন বরং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চিন্তিত। এগুলো আমাদের হতাশ করে। কারণ আপনি যখন একটা রাষ্ট্রকে গড়ে তুলতে চাচ্ছেন, রাষ্ট্রকে স্বনির্ভর এবং উন্নত করে তুলতে চাচ্ছেন তখন সেটা শিক্ষকদের খাটো করে কখনো করা সম্ভব নয়। আজকে যারা রাষ্ট্র চালাচ্ছে তারা অবশ্যই মেধাবী। রাষ্ট্রের আমলাতন্ত্রে বা সরকারে যারা আছেন তারা অবশ্যই মেধাবী। এই জায়গায় যে মানুষগুলো যাচ্ছে তাদের শিক্ষকরাই তৈরি করে পাঠাচ্ছে। যদি সোনার বাংলা গড়তে হয় তাহলে প্রথমে শিক্ষকদের মর্যাদার আসনে বসাতে হবে। সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের নাম প্রত্যাহার করে সতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করতে হবে।'
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, 'আমাদের উপর নিয়মতান্ত্রিকভাবে যে মানসিক নির্যাতন তারা করে যাচ্ছে। একটার পর একটা যে আঘাত আমাদের দিয়ে যাচ্ছে, আমরা তার অবসান চাই। অনেক জায়গায় কিছু মানুষ বলে যাচ্ছেন শিক্ষকদের গায়ে যখন আঘাত লাগে ঠিক তখনই তারা কথা বলে। হয়তো কিছুটা সত্য থাকতেও পারে। এটা যদি আংশিক সত্য হয় তাহলেও আমাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই আন্দোলন শিক্ষকদের ব্যক্তিগত কোন আন্দোলন নয়। তারা এ আন্দোলন করছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যারা এ মহান পেশায় আসতে চাই।'
তিনি আরো বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সাথে আলোচনাকালে যদি শুধু প্রত্যয় স্কিম থেকে শিক্ষকদের নাম প্রত্যাহার করে তবেও আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে যতদিন পর্যন্ত না আমাদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন হবে। এটাও আমাদের অন্যতম মূল দাবি।'
মন্তব্য করুন