
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ, ২০২৪, ০৪:০২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ৩নং হোসেনগাও ও ৪নং লেহেম্বা ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের অবস্থা সুগম করতে রাউৎনগর এলাকায় কুলিক নদীর উপর ব্রিজ নির্মানের জন্য দরপত্র আহবান শেষে কার্যাদেশ প্রদান ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও দীর্ঘ ৩ বছরেও ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়নি। আদৌও এই ব্রিজ নির্মাণ করা হবে কি না এই নিয়ে চলছে জনমনে হতাশা ও অসন্তোষ।
তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ বলছে, সময় মতো টিকাদার কাজ না করায় তার কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।সেই সাথে পুনরায় টেন্ডার অনুমোদন মিলায় শীঘ্রই দরপত্র আহবান করা হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার রাউৎনগর-ব্রহ্মপুর এলাকাকে কুলিক নদী ২ ভাগে বিভক্ত করে। নদীতে ব্রিজ না থাকায় পূর্বপাড়ের বসতপুর, ব্রহ্মপুর, লেহেম্বা, শ্যামাডাঙ্গী, রওশনপুর, বিরাশি, শালবাড়ী, কোচল, মমরেজপুর, চাপোড় পার্ব্বতীপুর, বাঁশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দাদের নদীর পশ্চিম পাড়ের রাউতনগর বাজারে আসতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখানে একটি ব্রিজ নির্মানের দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে দশম জাতীয় সংসদ ছিল উত্তপ্ত। তৎকালীন এমপি অধ্যক্ষ ইয়াসিন আলী, সংরক্ষিত আসনের এমপি সেলিনা জাহান সংসদে একাধিকবার দাবি তোলেন রাউৎনগর কুলিক নদীর উপর ব্রিজ নির্মানের।
তারই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ রাউৎনগর এলাকায় কুলিক নদীতে ব্রিজ নির্মানের কার্যক্রম শুরু করে।
২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর কুলিক নদীর উপর ১৩৫ মিটার ব্রিজ নির্মানের কার্যাদেশ আহবান করে এজন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। যথারীতি ডিসিএল নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়।১৬ নভেম্বর ২০২৩ তারিখের মধ্যে কাজ বুঝে দেওয়ার শর্তে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তারা নির্মান কাজ শুরু করার জন্য মালামাল এনে ফেলায় কুলিক নদীর তীরে। এ সময় ব্রিজের সম্ভ্রাব্য এলাকায় জমির মাীরকদের মধ্যে শুরু হয় জটিলতা ।
একদিকে জমি নিয়ে জটিলতা অন্যদিকে মালামালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হতাশায় পড়ে। এ সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্নধার মারা যাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে নির্মাণ কাজ।
এদিকে দীর্ঘ ৩ বছরেও কাজ শুরু না করায় ঠাকুরগাঁও এলজিইডি ইতোমধ্যে পূর্বের কার্যাদেশ বাতিল করে তার প্রদত্ত জামানত বাজেয়াপ্ত করেছে।
এ ব্যপারে ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মামুন বিশ্বাস পূর্ববর্তী ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করার কথা স্বীকার করে বলেন, ৩ বছরেও কার্যাদেশ অনুযায়ী নির্মান কাজ সমাপ্ত করার পরিবর্তে কাজ শুরু না করায় ওই টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে।তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করায় ঠিকাদার উচ্চ আদালতের স্মরনাপন্ন হয়েছে। এদিকে নতুন করে টেন্ডারের অনুমোদন পাওয়ায় খুব শীঘ্রই নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬-৮৭ অর্থ বছরে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় কুলিক নদীর উপর স্লুইস গেইট-কাম ব্রীজ নির্মান করা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মাথায় ১৯৮৮ সালের বন্যায় ব্রিজটি ভেঙ্গে যায়। বন্যার পানিতে ভেসে যায় ব্রিজের উভয় পাড়ের সংযোগ সড়ক। সেই থেকে ব্রিজের অবকাঠামো মাঝ নদীতে পড়ে আছে ব্রিজের কংকাল হিসেবে ।ব্রিজের উভয় পাশে বছরের পর বছর নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে সেটি মানুষের চলাচলে কোন কাজে আসছে না।
স্থানীয় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে নদীতে একটি বাঁশের সাঁকো দেওয়া হয়েছে।৩নং হোসেনগাঁও ও ৪নং লেহেম্বা ইউনিয়নের শতশত মানুষ প্রতিদিন ওই বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদীর পশ্চিম পাশের বাজার রাউৎনগর বাজার এবং রাউৎনগর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যাতায়াত করে থাকে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।তাদের দাবি রাউৎনগর ব্রিজ কি কোনদিন আলোর মুখ দেখবে না।
রসুনপুর গ্রামের কলেজ ছাত্র শাহিরুল ইসলাম জানান, সাঁকোর উপর দিয়ে সাইকেল, মোটর সাইকেল, রিক্সা-ভ্যান পাড়াপাড় করা গেলেও ধান পাট গম বিক্রি করতে হাটে নিতে পারিনা।ভ্যানে করে ৫কিলোমিটার দূর দিয়ে ঘুরে যেতে হয় রাউৎনগর বাজারে। অথচ নদীতে একটি ব্রিজ থাকলে এক কিলোমিটার পার হয়েই বাজারে যাওয়া যেত।
ব্রক্ষপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসান আলী জানান, বর্ষাকালে নদীতে যখন পানি ভরাট হয়ে যায় এবং সাঁকো পানির নীচে তলিয়ে যায় তখন নৌকা এ এলাকার মানুষের একমাত্র ভরসা। সে সময় পূর্বপাশের স্কুল কলেজগামী ছেলে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। রাউৎনগর উচ্চ বিদ্যলয়ের ছাত্রী বৃষ্টি আকতার জানান, বর্ষকালে আমাদের বাড়ি হতে দুটি করে ড্রেস নিয়ে স্কুলে আসতে হয়।একটি ড্রেস পড়ে আমরা নদী পার হই। আর আরেকটি ড্রেস পড়ে স্কুলে যাই।
তোজাম্মেল হক নামে একজন পথচারী জানান, নদীর পূর্বপাশের আমাদের ১০ গ্রামের কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা গর্ভবতী মায়ের সন্তান প্রসবের ব্যথা উঠলে তাকে হাসপাতালে নিতে ১০ কিঃ মিঃ অতিরিক্ত রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। অথচ এখানে ব্রিজ একটি থাকলে মাত্র ৫ কিঃ মিঃ রাস্তা সহজে ও অল্প সময়ে পৌছানো সম্ভব হতো।
কৃষক আজগর আলী জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে আমরা একসঙ্গে ৫/১০ মন ধান, গম, পাটসহ বিভিন্ন সবজী বাজারে নিতে পারি না।বেশি পরিমানে ধান গম গম বিক্রি করতে হরে অযথা ৫ মাইল অতিরিক্ত রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
রহিম উদ্দীন নামে একজন পথচারী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবার (ইউনিয়ন পরিষদ ও এমপি) ভোটের সময় নেতারা ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রæতি দিলেও ভোট শেষে তারা সবকিছু ভুলে যান। সে কারণে দীর্ঘ ৩০ বছরেও এ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ শেষ হয়নি।
হোসেনগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি জানান, রাউৎনগর এলাকায় কুলিক নদীতে ব্রিজ নির্মানের দাবি এলাকার আপামর জনগনের সকলের দাবি। উপজেলা প্রকৌশল অফিস দ্রুতই এখানে ব্রিজ নির্মানের কাজ শুরু করবেন এই প্রত্যাশা জানাই।
মন্তব্য করুন