রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২ জুলাই, ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

নতুন কর্মসূচি দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন আন্দোলনকারীরা

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ের অবরোধ তুলে নিয়েছে। আগামীকাল শনিবার বিকেল ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে কোটা সংস্কারে 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন'। সেখানেই জানিয়ে দেওয়া হবে পরবর্তী কর্মসূচি। সে হিসেবে কাল ব্লকেড বিক্ষোভ কিংবা অন্য কোনো কর্মসূচি নেই।

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের একদফা দাবিসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকেল ৫টার দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসে তাঁরা। বিকেল সোয়া ৬টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

শাহবাগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আজ বিকেলের কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।

জাতীয় সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে আইন পাস করে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে ৫ শতাংশ কোটা রেখে বাকি কোটা বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়ে রেখেছেন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

ঘোষণা অনুযায়ী, আজ বিকেলে বিক্ষিপ্তভাবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকে। ৫টার দিকে শুরু হওয়া একটি মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগ মোড়ে আসে। তাঁরা সেখানে নানা স্লোগান দেয়।

পুলিশের বাধা ও হামলার মধ্যেই গতকাল বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শাহবাগসহ সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। দেশের কোথাও কোথাও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা এবং কুমিল্লায় ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে দশের অধিক শিক্ষার্থী আহতও হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সড়ক ও রেল আটকে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। তাঁদের অবরোধে চরম ভোগান্তিতে পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা করে। এতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।

পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।

বিষয়টি আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে।

গতকাল আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবে না। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে আবারও 'ব্লকেড' কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এরমধ্যে গতকাল শিক্ষার্থীদের সড়ক ছেড়ে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একই সঙ্গে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিতও দেন তিনি। কিন্তু সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই এদিন সড়কে নামে শিক্ষার্থীরা। 

 

মন্তব্য করুন