প্রকাশিত: ৫ জুন, ২০২৫, ০৯:১৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

পঞ্চগড়ে এবার ঈদের ছুটিতে  যেসব দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যেতে পারেন


মোঃএনামুল হক পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি:


আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা । মুসলিমদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব এটি। এই ঈদের ছুটিতে বাড়তি আনন্দ যোগ করে ভ্রমণ। তাই অনেকেই ঘুরতে যেতে চান। পঞ্চগড়ের আশেপাশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দলবেঁধে ঘুরে আসতে পারেন এই সুযোগে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বোঝাপড়া ঠিক রাখতে ভ্রমণের কোনো বিকল্প নেই। পরিবারের সব সদস্য মিলে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া, হতে পারে সুন্দর সময় কাটানোর একটি উপায়। মানসিক প্রশান্তি তো আসেই। মন ভালো থাকে, আনন্দে থাকে। কিন্তু ব্যস্ত জীবনে সবসময় পরিবার পরিজন নিয়ে ভ্রমণের সেই সুযোগ হয়ে ওঠে না। তবে ঈদের সময় কিছুটা সুযোগ পাওয়া যায়। ঈদের ছুটিতে জেলার অন্যান্য আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। এ ছাড়া দেখতে পারেন উত্তরের প্রাণ প্রকৃতিসহ শতশত বছরের প্রাচীন নির্দশনের স্থাপনা। এসব প্রাচীন স্থাপনা ভ্রমণপ্রিয়দের জানিয়ে দিতে পারে ভ্রমণের নতুন অভিজ্ঞতা। তাই হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্ত ঘেঁষা সর্ব উত্তর জেলা পঞ্চগড়ে। ত্রিসীমান্ত বেষ্টিত ছোট এ জেলায় সীমান্ত জুড়ে রয়েছে রূপের পসরা ছড়ানো নানান দর্শনীয় স্থান। সবুজ চা বাগান, নদ-নদী, স্থলবন্দর ও প্রাচীন স্থাপনা। এসব প্রাণ প্রকৃতি ও স্থাপনা পর্যটন শিল্পে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি পর্যটকদের ঘুরাঘুরির নতুন জায়গাও তৈরি করেছে। তো চলুন ঘুরে আসি উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড়ে আসলে দেখা যাবে শতশত বছরের প্রাচীন স্থাপনার মধ্যে আটোয়ারীর মির্জাপুর শাহী মসজিদ, ইমাম বাড়া, সুফী সাধকদের বারো আউলিয়া মাজার। এসব মুসলিম স্থাপত্যের মুঘল সাম্রাজ্যের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। হিন্দু পুরাকীর্তির মধ্যে রয়েছে গোলকধাম মন্দির, জগবন্ধু ঠাকুর বাড়ি, বদেশ্বরী মহাপীঠ মন্দির, কালী মন্দির। এসব মন্দিরগুলো রয়েছে চমকপ্রদ ইতিহাস। এসব স্থাপনার বাইরেও রয়েছে ভিতরগড়ের দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম প্রত্নতত্ত্ব নগরী, পনের শ বছরের প্রাচীন মহারাজার দীঘি ও দেশের একমাত্র পাথরের জাদুঘর, আনন্দধারা রিসোর্ট বা কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের রওশনপুর এলাকায় অবস্থিত। তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে সুনিবিড় মনোরম পরিবেশে এই রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে।প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ দেখতে পাবেন এই রিসোর্টে গেলে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র অর্গানিক চা বাগান। সৌখিনতার বসে মানুষ কত কি করতে পারে সেটা দেখতে পাবেন এই কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট আনন্দধারা রিসোর্টে গেলে। দৃষ্টিনন্দন গেট দিয়ে রিসোর্টের মধ্যে প্রবেশ করলে দেখতে পাবেন লতাপাতার ছায়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি পথ। এই পথের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে আপনার অন্যরকম একটি অনুভূতি অনুভব করবেন। যেদিকে তাকাবেন দেখতে পাবেন সবুজের সমারোহ, মাঝে দেখতে পাবেন আধুনিক দৃষ্টিনন্দন একটি কটেজ। মাঝে একটা লেকও রয়েছে, তার পাশে কয়েকটি কটেজ। লেকের উপর তৈরি করা হয়েছে ব্রিজ, ব্রিজ পেরিয়ে যাওয়া যায় রেস্টহাউজে। রয়েছে হিমালয় বিনোদন পার্ক, এটি পঞ্চগড় শহরের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র । পঞ্চগড় জেলায় একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত হিমালয় বিনোদন পার্ক পঞ্চগড়ের সংস্কৃতি ও আনন্দ বিনোদনের ইতিহাসে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রকৃতির নির্মল বাতাস আর সবুজে ঘেরা পরিবেশে পঞ্চগড় জেলা শহরের নিকটবর্তী টুনিরহাট সড়কের তালমা বাজারের পাশে তালমা নদীর কোল ঘেঁষে প্রকৃতির ছোঁয়ায় প্রায় সাড়ে আট একর জমির উপরে বাগান, বিনোদন পার্ক, ভবন ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন রকমের রাইড নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে হিমালয় বিনোদন পার্ক। ২০১৭ সালের ২৬ মে প্রতিষ্ঠিত হিমালয় বিনোদন পার্ক স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং পঞ্চগড়ে আগত প্রচুর সংখ্যক পর্যটক ও দর্শনার্থীগণ এখানে ঘুরতে আসেন। খোলামেলা পরিবেশের হিমালয় বিনোদন পার্ক পিকনিক স্পট হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।
এবছর নতুন করে যোগ হয়েছে একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র জেলা প্রশাসকের ইকোপার্ক ।
পঞ্চগড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল জেলা শহরে সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোশকতায় একটি শিশুপার্ক গড়ে তোলা। অবশেষে শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে ঐতিহাসিক মিরগড়ের করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে কাঙ্ক্ষিত মিরগড় ইকোপার্ক। ২১ একর জমিতে গড়ে ওঠা ইকো পার্কে রয়েছে শিশু, বয়ষ্কসহ সব বয়সের মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা। মিরগড় জেলা প্রশাসন ইকোপার্কে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে ওঠা পার্কটির রমজান মাসে সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এরপর থেকেই সেখানে ভিড় শুরু হয়। ইকো পার্কের প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। অনেকে রোজার মধ্যেই শিশুদের নিয়ে পার্কটি দেখতে এসেছেন। এবার ঈদে ৫০ হাজারের বেশি স্থানীয় পর্যটক ইকো পার্কে আসবেন বলে আশা করছেন জেলা প্রশাসক সাবেত আলী।
এ ছাড়া দেশের একমাত্র চারদেশীয় স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন হচ্ছে উত্তরের এ জেলায়। যে ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মানুষ চলাচল করে। আগামীতে প্রতিবেশী দেশ চীন যুক্ত হলে পঞ্চদেশীয় স্থলবন্দর হিসেবে রূপ নেবে এ স্থলবন্দর। এ কারণে বন্দরটি ঘিরে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘার গল্প এ জেলা ঘিরে। প্রতি বছর হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত যুগল দেখতে লাখো পর্যটক ভারতের দার্জিলিং ও নেপালে ছুটে যান। সেই হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপমাধুর্য কাছ থেকেই দেখা মেলে এ জেলায় আসলে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন শতশত পর্যটকের সমাগম ঘটে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ দেখতে। কাঞ্চনজঙ্ঘার এই মোহনীয় রূপ দর্শনের সঙ্গে মহানন্দা নদীর রূপও জড়িয়ে যায়। দুই দেশের সীমান্ত প্রবাহিত মহানন্দা নদীর তীরে দাঁড়িয়ে যেমন কাছ থেকে দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার, তেমনি মহানন্দার জলেও ভাসে সে পাহাড়ের মায়া। আর হাজার হাজার শ্রমিকের দলবেধে পাথর উত্তোলন, সূর্যাস্ত ও সন্ধ্যায় ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাস ও হিমপ্রবাহ উপভোগের জায়গাও এ জেলা।

মন্তব্য করুন