
প্রকাশিত: ২৩ জুন, ২০২৪, ০৪:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইক্ষু চাষের বিকল্প নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইক্ষু, সাথী ফসল, গুড় উৎপাদনের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কর্ণফুলী সম্মেলন কক্ষে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য-প্রশাসন ও ইক্ষু প্রকপ্লের পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবউল করিম। তিনি বলেন, প্রকল্পটি ২ বছর শেষ হয়েছে। প্রকল্পের বাকি আছে আর ১ বছর। এক বছরে আমরা ইক্ষুসহ সাথী ফসল ও গুড় উৎপাদনে ৯ হাজার ৩৬০জন চাষীকে প্রশিক্ষণ দেবেন।
এই প্রকল্পের উপর কর্মশালা প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন, কনসালটেন্ট ও কৃষিবিদ ধনেশ্বর তঞ্চঙ্গা। তিনি বলেন, কৃষি জমির ৮% তে ইক্ষু চাষ করা যায়। বিভিন্ন ইক্ষু জাতের উপর বিএসআরআই রং বিলাস ইক্ষু চাষ অনেক ভাল হয়। ইক্ষুর সাথে চাষকৃত বিভিন্ন সাথী ফসল যেমন- মুলা, ফরাস সীম, গোল আলু, ধনিয়া, ফুলকপি, লাল শাক ইত্যাদি ফসল জন্মায়। বসত বাড়ির আঙ্গিনায় এসব সাথী ফসল উৎপাদন করা যায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদুত সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, আশা ও ভরসা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। ইক্ষু চাষের সফলতা ও বিফলতা নিয়ে কথা বলেন তিনি। একটু কষ্ট করলেই ইক্ষু চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসল চাষ করা যায়। এতে অনেক স্বাবলম্বী হওয়া যায়। উন্নয়ন বোর্ড চাইলে সরকারের দেওয়া অর্থ ছাড়াও বোর্ডের নিজস্ব উপার্জন বা থাকা দরকার। ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়েই সবাকে নিজ নিজ জায়গায় থেকে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়ন বোর্ডের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজে নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের সবকিছুতেই ব্যালেঞ্জ হওয়া দরকার। এখনও কৃষকদেরকে আমরা সে ভাবে পাচ্ছি না। সবাইকে কৃষি কাজের উপর ধাবিত হওয়ার আহবান জানান। সরকার
কৃষির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কৃষকদের জন্য পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড চিন্তাভাবনা করবেন। দয়া করে আপনারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যেন ঢাকা বা দেশের বাহিরে পঁচা জিনিস পাঠাবেন না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে কি করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সে লক্ষ্যে পাহাড়ের মানুষদের নিয়ে কাজ করবে উন্নয়ন বোর্ড। তিন জেলায় আগামীতে বাঁশ চাষের আওতায় আনা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান (যুগ্ন সচিব) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, ইক্ষু চাষ সব চেয়ে বেশি হচ্ছে আমাদের খাগড়াছড়ি জেলাতে। ইক্ষু চাষের সাথে সাথীফসল ও ভাল জন্মায়। ইক্ষু চাষকে আরো এগিয়ে নিতে হলে তিন পার্বত্য জেলায় নতুন নতুন কর্মসূচি হাতে নেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক রাঙামাটি অঞ্চল তপন কুমার পাল বলেন, তামাক চাষ বাদ দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় ইক্ষু চাষে কৃষকদের বেশি বেশি সচেতন করতে হবে। উচ্চ মূল্যের কৃষিজাত ফসল উৎপাদন করা যেতে পারে। পাহাড়ে উচ্চ ফসল চাষাবাদে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
রাঙামাটি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ ও কৃষিবিদ মোঃ নাসিম হায়দার বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তিন পার্বত্য জেলায় সম্ভাবনাময় ইক্ষু চাষ, লিচু চাষ, আম চাষসহ আরো অনেক গুলো চাষ করা সম্ভব। এতে করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবে পাহাড়ের মানুষ।
রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সুশীল প্রসাদ চাকমা ও সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও বেসরকারি চ্যানেল ডিবিসি'র জেলা প্রতিনিধি সৈকত রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ইক্ষু চাষীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যে ভাবে সহায়তা দিয়ে আসছেন সে সাথে তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেন পাম্পসেচ এর
ব্যবস্থা করে দিলে ভাল হবে। আর আপনারা যে সকল প্রকল্প গ্রহন করছেন ওই গুলো যেন যথাযথ ব্যবস্থা করা হয় সে দিকে নজর রাখতে বোর্ডের প্রতি আহবান জানান। সিনিয়র সাংবাদিক শান্তিময় চাকমা বলেন, উন্নয়ন বোর্ড বিগত দিনে বাঁশ চাষ, কাজু বাদাম ও কপি চাষ প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছিল কিন্তু তার কোন আউটফোট দেখতে পাইনি। আগামীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড যে সকল প্রকল্প গ্রহন করবে তা যেন একটু দীর্ঘ মেয়াদে হয়।
কৃষক বাদশা মিয়া ও সন্ধ্যা মনি চাকমা বলেন, উন্নয়ন বোর্ড আমাদের ইক্ষু চাষে যে ধরনের সহযোগিতা করেছেন সে সহযোগিতা পেয়ে আজ আমরা স্বাবলম্বী হয়েছি। ইক্ষু চাষের পাশাপাশি আমরা সাথী ফসল উৎপাদন করে লক্ষ টাকা আয় করতে পেরেছি। আগামীতে আমরা ইক্ষু চাষের পাশাপাশি আমরা আরো বেশি বেশি সাথী ফসল উৎপাদন করবো। আগামীতে উন্নয়ন বোর্ড আমাদেরকে কিছু না দিলেও নিজ থেকে ইক্ষু চাষ করবো।
মন্তব্য করুন