
প্রকাশিত: ৮ জুলাই, ২০২৪, ১০:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নিয়েছে ছাত্রলীগ।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক সাগর আহম্মেদ শামীম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিয়ামকে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে লিপ্ত থাকায় সিয়ামকে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
এরআগে, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নেয়া বিসিএসের ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদের ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পিএসসি ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবরে বিক্ষুব্ধ পুরো শিক্ষার্থী সমাজ। এ ঘটনায় পিএসসির ২ উপপরিচালক, সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ও পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি পুলিশ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, অভিযুক্ত সব কর্মকর্তা কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে সংস্থাটি। আজ সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত পিএসসির ৩ কর্মকর্তা, ভাইরাল হওয়া চালক আবেদ আলী, তার ছেলে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন, তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, নোমান সিদ্দিকী, সাজেদুল ইসলাম, আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, মো. জাহিদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন, মো. মামুনুর রশীদ, মো. নিয়ামুন হাসান, সাখাওয়াত হোসেন, সায়েম হোসেন ও লিটন সরকার।
এদিকে, সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় হৈচৈ চলছে। গত কোরবানি ঈদে তিনি ১ কেজি করে মাংস ১০০ জনকে দিয়েছেন। সেই মাংস বন্টন করেছেন দামি গাড়িতে চড়ে। সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। এরমধ্যে একটি গাড়ির দাম ৪০ লাখ আরেকটি ৭০ লাখ। পড়েছেনও দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ভারতের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সিয়াম মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগে ত্রান ও দুর্যোগ ব্যবস্থানা সম্পাদক পদ রয়েছে তার। এসব তথ্য সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা সিয়ামের বাবা আবেদ আলী পেশায় একজন গাড়ি চালক হলেও তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সামনে আসছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ঢাকার ভেতর তার দুইটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে। তবে সৈয়দ আবেদ আলীর ফেসবুক পেজে নিজের একটি হোটেলের তথ্য তুলে ধরেছেন তিনি নিজেই। গত ১৮ মে এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা।’
ফেসবুকে আবেদ আলীর একটি ছবি পোস্ট করে সিয়াম সম্প্রতি তার ফেসবুক আইডির পোস্টে লেখেন, ‘আব্বু কুয়াকাটা গিয়েছিলো একটা ব্যবসায়িক সফরে, সেখানে স্থানীয় এক ছোট ভাই ছবিটি তুলে ইনবক্সে দিলো। সাধারণত আব্বু কোন ওয়াক্তের নামাজ অবহেলা করে না, যখন যেখানে থাকে তখন সেখানেই পাক-পবিত্র জায়গা খুঁজে নামাজ আদায় করে নেয়। খুব সম্ভবত সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর ভালোবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমার বাবাকে কবুল করুক।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে বিমানের সিটে বসে আবেদ আলীর নামাজ আদায় এবং পুলিশের শীর্ষ প্রভাবশালী কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তোলা ছবিও। তবে একজন গাড়িচালক কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন ঘুরেফিরে সেই প্রশ্নই করছেন নেটিজেনরা।
প্রশ্নফাঁসে জড়িত পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া এবং অঢেল সম্পদ গড়ার কাহিনী এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এক সময় আবেদ আলী পিএসসির আলোচিত সদস্য প্রফেসর মাহফুজুর রহমানের গাড়িচালক ছিলেন। সাবেক জোট সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২৪তম ও ২৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল মাহফুজুর রহমানের গাড়িচালক আবেদ আলীর মাধ্যমে। মাহফুজুর রহমান তার গাড়িচালকের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র কোটি কোটি টাকায় বিক্রি করতেন। এছাড়া বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিতেন প্রফেসর মাহফুজ। সেই টাকা নেয়ার মাধ্যম ছিলেন তার গাড়ি চালক আবেদ আলী। ওই সময় টাকা লেনদেনকে কেন্দ্র করে আবেদ আলী পিএসসির তৎকালীন সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আসাদুজ্জামানকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় পিএসসির পক্ষ থেকে কাফরুল থানায় আবেদ আলীর বিরুদ্ধে জিডি দায়ের করা হয়েছিল। পরে ২০০৯ সালে মাহফুজুর রহমান কানাডায় পালিয়ে যান। কিন্তু আবেদ আলী বছর পাঁচেক চাকরি করার পর অবসর গ্রহণ করেন। অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক আবেদ আলীর কুয়াকাটায় থ্রি স্টার হোটেল ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ঢাকায় ৫ তলা ও ১১ তলার দুইটি বাড়ি, ছেলের ব্যবহৃত নামিদামি ব্রান্ডের দুটি গাড়ি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মন্তব্য করুন