রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭ মে, ২০২৪, ০২:৪৮ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

মাদকসেবনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারামারি, আহত ৩

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মাদকসেবনকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছাত্রলীগের একাংশের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারামারির হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেল সাড়ে ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এ ঘটনা ঘটে। এসময় দুপক্ষের ৩ জন আহত হয়েছেন।

মারামারির ঘটনায় আহতরা হলো-   বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কর্মী সৌরভ শেখ বন্ধন, চারুকলা অনুষদের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান পুলক এবং একই অনুষদের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী আলী অম্বর ফয়েজ ওরফে অপু। এছাড়াও ঘটনায় বন্ধনের পক্ষে যোগ দেয় শাখা ছাত্রলীগের তাশরিফ আহমেদ, রাহাত হাসান খান সময়, আল ফারাবি, শামসুল আরিফিন খান ওরফে সানি হাজারী, আজিজুল হক আকাশ, সিফাত, তাসিন তানভিরসহ ৪০ জন নেতাকর্মী। তারা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ বিকেল চারটার দিকে চারুকলা অনুষদের মুক্তমঞ্চের পিছনে গাজা সেবন করছিল বন্ধন ও তার দুই বন্ধু। এসময় তাদের নিষেধ করে চারুকলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখন বন্ধন ও তার বন্ধুদের সাথে তাদের (চারুকলা শিক্ষার্থী) সাথে বাকবিতন্ডা হয়। তখন চারুকলা শিক্ষার্থীরা অপু এবং পুলককে জানান এবং তারা তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুপক্ষের মাঝে হাতাহাতি হয়। এসময় বন্ধনের মাথায় আঘাত পায় এবং রক্তপাত হয়। তার কিছু সময় পরে বন্ধনের পক্ষে যোগ দেয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তারা চারুকলা অনুষদ ভবনের পিছনে থাকা অপুর মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অপুকে ও অনুষদে থাকা রফিকের দোকানের ভিতরে ঢুকে পুলককে রড এবং বাশ দিয়ে মারধর করে।

এছাড়াও তারা রফিককে ধাক্কা দিয়ে তার দোকানের ক্যাশবক্স থেকে নগদ আনুমানিক ছয় হাজার টাকা নেয়। এসময় টাকা নিতে বাধা দিলে তার দোকানে কর্মরত এক নারীর গায়ে হাত তোলে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, আহতদের চিকিৎসার জন্য রাবি মেডিকেল সেন্টারের দিকে পাঠানো হলে চারুকলার শিক্ষার্থীদের বাশের লাঠি নিয়ে দল বেধে মেডিকেলের দিকে এসে জড়ো হয়। তখন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল গালিব উপস্থিত হয়ে তাদের শান্ত হওয়ার নির্দেশনা দেন। পরে মেডিকেল সেন্টারে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুও উপস্থিত হয়।

এ বিষয়ে আহত সৌরভ শেখ বন্ধন বলেন, আমি ও আমার বন্ধুরা চারুকলায় ঘুরতে গেলে কিছুক্ষণ দাঁড়ায় থাকার পরে একজন শিক্ষার্থী এসে জিজ্ঞেসা করে তোরা কারা। আমরা আমাদের পরিচয় দেওয়ার পরেও তারা বলে তোরা এখানে কী করতে আসছিস। এক পর্যায়ে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। কিছুক্ষণ পর সেখানে অপু ভাই ও পুলক ভাই এসে আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এসময় তারা বলে আমাদের বাসা কাজলায়, চারুকলায় তোরা আমাদের চিনিস না?  এভাবে কথা বলতে বলতে তারা আমার জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং সামনে থেকে মুখে চড়-থাপ্পর ও ঘুসি মারে। এছাড়াও পেছন থেকে একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমার বন্ধুদের ফোন দিলে তারা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে আসে। গাঁজা সেবনের বিষয়ে জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে তিন। 

এ বিষয়ে চারুকলা শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান পুলক বলেন, এক ছোট ভাই আমাকে ফোন দিয়ে আমাকে আসতে বলে। আমি যাওয়ার পরে দেখছি বন্ধন ওরা ছিল। ওরা আমাকে চিনে তবুও আমার সাথে তুই-তুকারি করে এবং আমার দিকে তেড়ে আসে বলে তুই তুকারি করলে কি করবি বলে। এর পরে আমাকে ধাক্কা মারে এবং  সবাই মিলে আমাকে মারা শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, এর পরে একটা পর্যায়ে মারামারি করতে করতে আমরা রফিক ভাইয়ের দোকানে ঢুকে যাই। তারপরে আমি গালিব জানালে তিনি বললেন আসছি। আসতে আসতে ওরা প্রায় ৪০-৫০ জন ছেলেপেলে ডেকে রফিক ভাইয়ের দোকানে এসে বাঁশ, লাঠি এগুলো দিয়ে আমাকে এবং অপু ভাইকে মারে। এছাড়াও তারা দোকানে লুটপাট করেছে, অপু ভাইয়ের গাড়ি ভাংচুর করেছে। আমি তাদেরকে বলেছি ভাইয়েরা আসছে বললেও তারা শোনেনি সরাসরি আমাদের মার শুরু করে। মেডিকেলে এসেও আমরা নামতে পারছিলাম না। তারপরে ভাইয়েরা (শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা) এসে আমাদের নামায়।

এ ঘটনায় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী জানান, আমি অফিসিয়াল কার্যক্রমে ব্যস্ত ছিলাম এর মধ্যে আমাদের ছাত্ররা জানায় বাহিরে মারামারি হচ্ছে।এ ঘটনা শুনে আমি তৎক্ষনাৎ বাহিরে চলে আসি এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া দেখে বিষয়টা প্রক্টর স্যারকে জানাই এবং প্রো ভিসিকেও অবগত করি তারা এ বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহণ করছেন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আশাবুল হক বলেন, গাজা খাওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলাটা হয়েছে। যারা মার খেয়েছে তারা আমাদের ছাত্র, আর যারা মেরেছে তাদেরও আমাদের ছাত্র বলা হচ্ছে। কেউ বলছে বহিরাগত ছিল। যেহেতু এ ঘটনা চারুকলা অনুষদের বাউন্ডারির ভেতর ঘটেছে। শিক্ষার্থীরা ডিন মহোদয় বরাবর একটা আবেদন করবে। তারপর ডিন তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেবে। তারপর আমরা প্রশাসন দেখবো।

মন্তব্য করুন