রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭ মে, ২০২৪, ১০:২২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

রাবিতে হিন্দু শিক্ষার্থীকে 'শিবির' আখ্যা দিয়ে মারধর

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে হল ছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে। মারধরের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষার্থীকে 'শিবির' আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার  রাত ৮টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম সবুজ বিশ্বাস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। হল সূত্রে জানা যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেতা নিয়াজ মোর্শেদের অনুসারী এবং তার মাধ্যমেই হলে উঠেছিল। অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক।

এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জন ছাত্রলীগ কর্মী। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। 

গত বুধবার রাতে তিনি ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন। তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক শারীরিক নির্যাতন এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন।

অভিযোগে ভুক্তভোগী সবুজ বিশ্বাস উল্লেখ করেছেন, ‘গত ১৬ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ২ টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক ও তার ৮-১০ জন অনুসারী আমাকে কক্ষ থেকে বের করে হলের ছাদে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে এবং শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়।

পরবর্তীতে নিজেকে সনাতনী দাবি করলে আরও বেশি মারপিট করে। আমি প্রাণ রক্ষার্থে দৌড়ে হল ত্যাগ করি। এমতাবস্থায় নিজের নিরাপত্তা শঙ্কায় পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।'

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সবুজ বিশ্বাস বলেন, 'তারা ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করে হল থেকে বের করে দিয়েছে। এতে পায়ের বিভিন্ন অংশে ফেটে গেছে। সেই সাথে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ঘটনা শোনার পর বাড়ি থেকেও বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। পরিবারের লোকজন ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা বলছে। আর বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবস্থান করাটাও আমার জন্য নিরাপদ নয়। তাই আমি বাড়িতে চলে আসছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতদিন পর্যন্ত আমাকে নিরাপত্তা দিতে পারবেনা ততদিন পর্যন্ত আমি ক্যাম্পাসে আসবো না।'

রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, আর্থিক অবস্থা খারাপের জন্য একটা সনাতনী দাদা হলে তুলে দিয়েছিল। পরে তিনি নিয়াজ মোর্শেদের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছিল।

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান বলেন, আমি গত কয়েকদিন সাংগঠনিক কাজে ব্যাস্ত থাকার কারবে হলেই যেতে পারি না। সেখানে একটা হিন্দু ছেলেকে শিবির আখ্যা দিয়ে মারা তো প্রশ্নই আসে না। এ ঘটনার সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 


তিনি আরও বলেন,'যদি কেউআমার সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পারে আমি ছাত্রলীগ থেকে সেচ্ছায় অব্যাহতি নেব।'

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'সংঘর্ষের ঘটনার সাথে সম্পর্কিত সকল ঘটনা আমাদের যে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে তারা দেখবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এইটা না আসলে তখন আমরা আলাদা করে দেখব। আপাতত এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না কারণ রাজনৈতিক ভাবে হলে উঠেছিল। এছাড়াও সে আমাদের আবাসিক শিক্ষার্থী না।

মন্তব্য করুন