মাদারীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১০:৫০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশে বন্ধ অবৈধ ইটভাটা ফের চালু

মাদারীপুরের কালকিনিতে প্রশাসন কতৃর্ক বন্ধ অবৈধ ইটভাটাটি আবারো চালু হয়েছে। ইটভাটাটির পাশেই একটি বাজার ও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা এলাকা থেকে তোলা ছবি।

আবাসিক এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষি জমিতে আইন করে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করেছে সরকার। অথচ, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ফাসিয়াতলা বাজার ও পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংলগ্ন আওয়ামী লীগ নেতার ‘মেসার্স অর্ণিমা কনস্ট্রাকশন এন্ড ব্রিকস্; ফিল্ড’ (এমওবি) নামের একটি অবৈধ ইটভাটা আবারো চালু হয়েছে।

এর আগে অনুমোদনহীন এই ইটভাটাটি প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল। বর্তমানে ইটভাটাটির পরিবেশের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স কোন কিছু নেই। এই ইটভাটার চিমনি থেকে বের হওয়া দূষিত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

এছাড়া এই ধোঁয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।


ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১ কিলোমিটার, বনাঞ্চল থেকে ২ কিলোমিটার এবং ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়ক থেকে অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

কিন্তু এ আইন লঙ্ঘন করে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের ফাসিয়াতলা এলাকায় হাফিজুর রহমান ওরফে মিলন এমওবি নামের এই অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে আসছে। একই সঙ্গে তিনি আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। হাফিজুর রহমান কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।

জানতে চাইলে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার ইটভাটাটি বৈধ, অনুমোদনও আছে। দুবছরের বেশি সময় বন্ধ ছিল, এখন নতুন ইট পোড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি। পরিবেশসহ সব বিভাগে আমার লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করা। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। আর সবাই এভাবেই ইটভাটা চলায়। আমার ইটভাটা মানুষের কোন ক্ষতি করছে না।’

স্থানীয় লোকজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ১০১ নং পশ্চিম চর মৌজায় প্রায় ২ একর জমিতে এমওবি নামক ইটভাটা চালু করেন। শুরুতে কাঁঠ পুড়িয়ে ইট পোড়ালেও প্রশাসনের চাপে ২০২০ সালের দিকে কাঁঠের পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার শুরু করে। এই ইটভাটার ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হওয়ায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকায় এলাকাবাসী এটি বন্ধে প্রশাসনের কাছে আবেদনবকরেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে প্রশাসন স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিয়ে ওই ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে আবারো চালু করে অনুমোদনহীন এই ইটভাটা। বর্তমানে কাঁঠ ও কয়লা মিশ্রিত করে ইট পোড়ানো হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফাসিয়াতলা বাজার ঘেষে একটি ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ভাটার চারিপাশেই ঘরবসতি। ৪০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে ফাসিয়াতলা মার্চেন্টস্; প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিনগর উচ্চ বিদ্যালয়সহ তিনটি মাদ্রাসা রয়েছে। ইটভাটার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষণসহ ধুলাবালুর মধ্য দিয়ে যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছেন পথচারীদের। ইটভাটার কারণে বাজারের গ্রামীন সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে।

ফাসিয়াতলা বাজার কটিমির সভাপতি নজিব খান বলেন, ‘ইটভাটার দূষিত ধোয়ায় আমরা খুব স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি। অবৈধ এই ভাটাটি বন্ধের জন্য এর আগেও আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি। ডিসি, ইউএনও কাছে লিখিত অভিযোগ দিছি। তারপর আড়াই বছরের মত বন্ধ ছিল। এখন আবার ক্ষমতাবলে ভাটা চালু করছে। এই ভাটার আশেপাশে তিনটি মাদ্রাসা, দুটি স্কুল, ঘনবসতি, হাটবাজার। ভাটাটি সবার ক্ষতির কারণ হচ্ছে। আমরা দ্রুত এই ইটভাটাটি বন্ধের দাবি জানাই।’

স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘আইন না মেনে মাদ্রাসার পাশে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। আড়াই বছর আগে এ ইটভাটা প্রশাসন বন্ধ করে দিলেও নতুন করে এ বছর আবার সেই ইটভাটা চালু করা হয়েছে। এতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘আমি জানতাম এমওবি নামের ইটভাটাটি বন্ধ। এটি চালু হয়েছে কবে তাবআমার জানা নেই। যদি তিনি অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে ইটভাটা চালু করেবতাহলে ওই ভাটা বন্ধসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ আনোয়ার বলেন, ‘বাজার বা লোকালয়ে গড়ে ওঠা কোন ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র পাবে না। যদি কোন ইটভাটা পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালিত হয় তাহলে সেটা অবৈধ ইটভাটা। এসব ইটভাটা বন্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। অচিরেই এমওবি ইটভাটাটি বন্ধে আমাদের অভিযান চালানো হবে।’

মন্তব্য করুন