সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: ২২ জুন, ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢল কমা অব্যাহত থাকায় বন্যা সিলেটে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে নদ-নদীর পানি আরও কমেছে। শনিবার (২২ জুন) সকালে সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি অন্যান্য পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।

এদিকে, নদ-নদীর পানির সঙ্গে বৃষ্টিপাতও কমেছে সিলেটে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মাত্র ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিলেটে বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সিলেটে ২৪ ঘন্টায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও দুয়েকদিন বৃষ্টিপাত হতে পারে।


পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।
সুরমা নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে শনিবার সকালে বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। সকাল ৯টায় ১০ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে গতকাল এই পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ০৯ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। শনিবার সকাল ৯টায় কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শুক্রবার এই পয়েন্টে পানি ৩৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।


তবে কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃহস্পতিবার এই পয়েন্টে পানি ১০ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার সকাল ৯টায়ও একই মাত্রায় প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে কুশিয়ারা নদীর শেরপুর পয়েন্টে শুকবারের তুলনায় আরও কমেছে। শনিবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে শুক্রবার এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া শনিবার লোভা, সারি, ডাউকি, সারিগোয়াইন ও ধলাই নদীর পানি আরও কমেছে।

জেলা প্রশাসন আরও জানায়, বৃষ্টিপাত কমতে শুরু হওয়ায় গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সূর্য ওঠায় বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। সরকারি বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র শনিবার দুপুরে বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানায়, বর্তমানে সিলেটে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪৫ জন বন্যা কবলিত। এর মধ্যে মহানগরে ৩০ হাজার। বর্তমানে মহানগরের ১৩টি ওয়ার্ড জেলার ১০৭টি ইউনিয়নে বন্যার  পানি রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে নামছে সে পানি। 

সিলেটে বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে ২২ হাজার ৬২৩ জন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। পৌঁছানো হচ্ছে বিশুদ্ধ  পানি ও ওষুধপত্র।
টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন ফের কবলিত হয় সিলেট।

ঈদুল আযহার দিন (১৭ জুন) ভোররাত থেকে  সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। পুরো জেলায় বিস্তৃতি ঘটে বন্যার। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে  সিলেটের সব নদ-নদীর পানি। এ অবস্থা চলমান থাকে পরবর্তী ৩ দিন। একপর্যায়ে সিলেটজুড়ে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখে। গত দুদিন ধরে  সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র শনিবার বিকাল ৩টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো। তবে এ নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে রয়েছে বিপৎসীমার নিচে। একই সময়ে কুশিয়ার নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০২ ও শেরপুর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

মন্তব্য করুন