বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ মার্চ, ২০২৪, ০৪:৫৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

চিএা নদীর চরে ‘মিনি সুন্দরবন’ হাতছানি দিচ্ছে অপর সম্ভাবনা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাগেরহাট জেলার তিন উপজেলার মিলনস্থল ‘মিনি সুন্দবনে’ হাজার হাজার অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত মিনি সুন্দরবনে অতিথি পাখি উড়াউড়ি দেখে প্রকৃতি প্রেমী যে কোন মানুষের।

ফকিরহাট, চিতলমারী ও বাগেরহাট সদর উপজেলার মিলনস্থল চিত্রা নদীর পাড়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ‘মিনি সুন্দবন’ টি চিতলমারী উপজেলার রায়গ্রাম, শুড়িগাতী, খিলিগাতী, করাতদিয়া, ডুমুরিয়া, আড়ুলিয়া, খাড়িয়াসহ নদীতীরের অধিকাংশ গ্রামই এখন মিনি সুন্দরবনের অংশ। এখানেই বছরের প্রায় ছয় মাস মুখরিত থাকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে।

সুন্দরবনের আদলে প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা এ বনে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, গোলপাতা-সহ সকল প্রজাতির গাছগাছালি ও বণ্যপ্রাণী যেন সুন্দরবনকে তুলে ধরছে। গাছপালা অতিথি পাখিদের এ অভয় আশ্রম দর্শনার্থীদের কাছে নান্দনিক দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে। এখানে গোদাড়া গেটে গড়ে উঠছে ‘ইকোট্যুরিজম’ পার্ক।

উজলপুর চিত্রা নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড়ালে চোখে পড়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে হাজারো পাখি উড়ছে। বসছে গাছের ডালে। আবার উড়ছে দিগন্তে। লোকালয়েই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা মিনি সুন্দরবন যেন অতিথি পাখির ‘স্বর্গরাজ্য’। নিরাপদ আশ্রয় হওয়ায় এখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পাখির সংখ্যা। নানা প্রজাতির পাখি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন নারী-পুরুষ, শিশু-যুবা-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অগনিত দর্শনার্থী।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার উত্তরে চিত্রাপারে দিন দিন সুন্দরবনের নানাপ্রজাতির গাছের সংখ্যা বাড়ছে। নদীসংলগ্ন গ্রামগুলোর অনাবাদি জমি এবং বসতবাড়ির আশপাশেও জন্ম নিয়েছে গোলপাতা, কেওড়াসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও লতাগুল্ম। শুধু গাছ-লতাগুল্ম নয় এখানে নানা বন্যপ্রাণীর বসবাস করছে। মেছোবাঘ, বাঘডাসা, খাটাশ, বনবিড়াল, সারেল, বিষধর সাপ, তক্ষক, কচ্ছপ, গুঁইসাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির উভচর ও সরীসৃপ প্রাণীর অবাধ বিচরণভূমি এ বন। মাছরাঙা, ঘুঘু, শালিক, দোয়েল, টুনটুনি, লেউ লেউ, বক,সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাসস্থলও এ ‘মিনি সুন্দরবন’।

একসময়ের খরস্রোতা চিত্রার চরজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ মিনি সুন্দরবন। জোয়ারের সময় নদীতীরের গাছগুলোর কিছু অংশ পানিতে ডুবলেও ভাটার সময় আবার তা জেগে উঠছে। যা হয় সুন্দরবনে।

স্থানীয়রা বলছেন, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চিত্রা নদীর চরে বেলে-দোআঁশ মাটিতে গোলপাতা, কেওড়াসহ সুন্দরবনের গাছপালা জন্মাতে শুরু করে।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু ও  মূলঘর ইউপি চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার বলেন, প্রাকৃতিকভাবে এখানে সুন্দরবন গড়ে উঠেছে। চিত্রা নদীর তীরে জন্ম নিয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া, গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির গাছ। কয়েক বছর ধরে এসব গাছে শীত মৌসুমে হাজার হাজার পাখি আশ্রয় নেয়। এ কারণে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী পাখি দেখতে ভিড় করে।’ জায়গাটিকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য তঁরা এলাকাবাসী সকলের প্রতি আহব্বান জানান।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহা: খালিদ হোসেন বলেন, ‘আমি নিজে একাধিববার ‘মিনি সুন্দরবন’ পরিদর্শন করেছি। জায়গাটি অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ও মিনি সুন্দরবন হিসেবে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সমন্বয়ে সভা করে পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। 

গত কয়েক বছরে এখানে গাছের ঘনত্ব বেড়েছে। বর্তমানে এখান থেকে গোলপাতা বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে স্থানীয়রা। তবে অবাধে গাছপালা কেটে নিলেও উদ্যোগ নেই রক্ষণাবেক্ষণের। এখানকার গাছপালা সঠিকভাবে বাড়তে দিলে মনোরম এ পরিবেশ মিনি সুন্দরবন হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।

বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ আলম ফরাজী বলেন, চিত্রা চরের মাটি এবং এখানকার পরিবেশ সুন্দরবনের গাছগাছালি জন্মানোর জন্য উপযোগী। জোয়ার-ভাটা, মিষ্টি-লোনা পানি এবং উপযুক্ত পরিবেশের কারণে চরের ম্যানগ্রোভ বন দ্রুত বাড়ছে।

মন্তব্য করুন