প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা, দুই বোনের সঙ্গে না ফেরার দেশে প্রেমা

 

চট্টগ্রাম অফিসঃ

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম শামীম ও লুৎফুন নাহার দম্পতি। ঈদের ছুটিতে তিন মেয়ে প্রেমা, আনিশা ও লিয়ানাকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন কক্সবাজারে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তাদের সেই যাত্রা।

এই দম্পতির পরিবারের ৫ সদস্যের মধ্যে চারজন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন আগেই। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের  নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন প্রেমা।

 শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কাছে হার মানেন তিনিও।

প্রেমার মৃত্যুর বিষয়টি  নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ধীমান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রেমার মা-বাবা, ‍দুই বোন আগেই মারা গেছেন। প্রেমা আইসিউতে ছিলেন। শুক্রবার সকালে সবশেষ প্রেমারও মৃত্যু হয়েছে।এই দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছে। বিষয়টি মর্মান্তিক।

  বুধবার সকাল ৭টার দিকে চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে দুইটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনার সূত্রপাত।

 দুর্ঘটনায় ১০ নিহতের তালিকায় ছিলেন প্রেমার বাবা রফিকুল ইসলাম শামীম, লুৎফুন নাহার  এবং ছোট দুই বোন আনিসা আক্তার (১৪), ছোট বোন লিয়ানা (৮) এবং শামীমের  ভাগনি তানিফা ইয়াসমিন।

প্রেমার পরিবারের সদস্যরা জানান, রফিকুল ইসলাম একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন আর বোন ছিলেন গৃহিণী। এই দম্পতির তিন মেয়ের মধ্যে প্রেমা ইসলাম সবার বড়। আনিশা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। সবার ছোট বোন লিয়ানা স্কুলে ভর্তি হয়নি।

 ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলামসহ তার পরিবারের ৫ সদস্য। ঈদের আনন্দ যে মৃত্যুর মিছিল হয়ে উঠবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। পরিবারের সবার মৃত্যুর পর বড় মেয়ে প্রেমা যেন সুস্থ হয়ে হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসে সেই প্রত্যাশা করছিলেন সবাই।

 সবশেষ প্রেমার মৃত্যুর পর দুমড়েমুচড়ে গেছে পুরো পরিবার।

রফিকুল ইসলামের শ্যালক রবিউল হাসান (লুৎফুন নাহারের ছোট ভাই) বলেন, আমার দুলাভাই, বোন এবং দুই ভগনির মৃত্যুর পর প্রেমা যেন বেঁচে থাকে সেই দোয়া করছিলাম। কিন্তু প্রেমাও মারা গেল। এমন মর্মান্তিক ঘটনা যেন আর কখনও না ঘটে।

প্রসঙ্গত গত বুধবার সকাল ৭ টার দিকে  রিলাক্স পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাসের সাথে দুইটি হাইয়েচ মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে ৭ জন নিহত ও পরে হাসপাতালে মারা যায় ৩ জন। ঘটনায় ৬ জন আহত হয়। 

সংঘর্ষে বাস ও সামনে থাকা হাইয়েচ মাইক্রোবাস  দুমুড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ফায়ার সার্ভিস দল ৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার ও ৬ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠায়।

 আহতদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন ও চমেক হাসপাতালে ২ জন মারা যায়।

মন্তব্য করুন