
প্রকাশিত: ২ ঘন্টা আগে, ১১:৩১ এ এম
অনলাইন সংস্করণ
দ
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দর উপজেলার হরিপুর রুটে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের তৃতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নাম দেওয়া হলো ‘মওলানা ভাসানী সেতু’। বুধবার দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটির উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। হরিপুর অংশে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানের।
দুপুর ১টায় সেতুর উদ্বোধন করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গাড়িতে চড়ে সেতু পাড়ি দিয়ে চিলমারী অংশে যান। এসময় উচ্ছসিত মানুষজন মুখে হাসি নিয়ে কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ কারে, কেউ বাইসাইকেলে, কেউ ইজিবাইকে চড়ে আবার কেউ পায়ে হেঁটে সেতু পাড়ি দেন। সেতু দেখতে উপস্থিত হন হাজার হাজার মানুষ।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেতুটির উদ্বোধন হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হযেছে। তারা আনন্দ-উল্লাসে উচ্ছসিত হয়ে পড়েছেন। হাসি ফুটেছে তিস্তাপাড়ের মানুষের মুখে। এই সেতুটি কুড়িগ্রামের চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের বহুকালের স্বপ্ন ছিলো। বুধবার দুপুরে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে।
হরিপুর এলাকার কলেজ শিক্ষক প্রভাত চন্দ্র পাল জানান,’ তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ দেওয়া আমরা খুব খুশি হয়েছি। বিখ্যাত মানুষের নামে সেতুটি হওয়ায় আমরা গর্ববোধ করিছি।’ ‘মওলানা ভাসানী সেতু হয়ে উঠবে তিস্তাপাড়ের মানুষের যোগাযোগ, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন,’ তিনি বলেন।
একই এলাকার স্কুলশিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান,’ আমরা জানতাম সেতুটি ‘চিলমারী-হরিপুর তিস্তা সেতু’ নামে চালু। আগে থেকেই এ ধরনের প্রচারনাও ছিলো। কিন্তু সেতুটি উদ্বোধন হলো ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ নামে।’
এলজিইডি অফিস সুত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধিন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যৌথভাবে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) ও ওপিইসি ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি) অর্থায়নে এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। শুরুতে ২০২৩ সালের জুনে শেষ করার কথা থাকলেও, নানা কারণে ৫বার সময়সীমা পিছিয়ে অবশেষে ২০ আগষ্ট বুধবার সেতুটি খুলে দেওয়া হয়।
সেতুটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩০টি পিলার, ২৮টি স্প্যান এবং ১৫৫টি গার্ডার। উভয় প্রান্তে পানি নিষ্কাশনের জন্য তৈরি করা হয়েছে ১২টি ব্রিজ ও ৫৮টি বক্স কালভার্ট। পাশাপাশি ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নদীশাসনসহ মোট ৫৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।
এ সেতুর মূল কাঠামো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। আর সংযোগ সড়ক, নদীশাসন, কালভার্ট ও জমি অধিগ্রহণে খরচ হয়েছে আরও ৩৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। তিস্তা নদীর বুকে এটি হলো তৃতীয় সড়ক সেতু এবং এটাই সবচেয়ে বড়।
প্রথম তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মিত হয় ২০১২ সালে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা এলাকায়। দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার, ব্যয় হয়েছিলো ৮৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয়টি নির্মিত হয় ২০১৮ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে। দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার, ব্যয় হয়েছিলো ১৩১ কোটি টাকা।
চিলমারী উপজেলার তিস্তাপাদের কৃষক আহাদ আলী শেখ (৭৫) জানান, আগে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় তাদের এলাকা অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চিকিৎসায় পশ্চাদপদ রয়েছে। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ চালু হওয়ায় তিস্তাপাড়ের গ্রামগুলো এখন শুধু উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। ‘আমি খুব খুশি হয়েছি। মরণের আগে তিস্তা নদীর ওপর সেতু দেখতে পেলাম,’ তিনি বলেন।
চিলমারীর ব্যবসায়ী আশরাফুল (৫৬) জানান, তিস্তা নদীর ওপর ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ চালু হওয়ায় চিলমারী থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার কমে গেছে। এতে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হবে। ‘সোনাহাট স্থলবন্দর আর চিলমারী নদীবন্দরের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলেছে,’ তিনি বলেন।
গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির নাম ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ দেওয়া হয়েছে। এই নাম সর্বজনগৃহিত। এতে বিখ্যাত মানুষকে সম্মান করা হয়েছে।
’দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই সেতু চালু হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষ থুশি। এটি শুধু একটি অবকাঠামো নির্মাণ নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্ন, উন্নয়ন ও সম্ভাবনার প্রতীক,’ তিনি বলেন।
মন্তব্য করুন