
প্রকাশিত: ১৪ ঘন্টা আগে, ০৯:৪৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
সদরুল আইনঃ
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) নিয়ে অসন্তোষ তুলে ধরেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের দাবি, সরকার এনসিপিকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় দেশের আরও ১৩টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নূর, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং গণফোরামের ডা: মিজানুর রহমান।
বৈঠক শেষে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সভাপতি মুজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদ নানা রূপে সুযোগ নিচ্ছে। এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে বর্তমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে না ওঠার জন্য সরাসরি সরকারকে দায়ী করার কথা জানিয়েছেন মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ, তাদের গ্রহণযোগ্যতাও ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এমনকি এনসিপি নেতারাও জনমানুষের কাছে এখন গ্রহণযোগ্য নন।’
১২-দলীয় জোটের প্রতিনিধি শাহদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, কিছু দল বিভিন্নভাবে সরকার বা প্রশাসনের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এসব বৈষম্য বন্ধ হওয়া উচিত।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো নিরপেক্ষ উদ্যোগকে দুর্বল না করে তোলে। এনসিপিকে যে ধরনের সরকারি প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, সেটা গণতন্ত্রের পথে অন্তরায়। উত্তরা মাইলস্টোন ট্রাজেডির ঘটনা সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা আর সামাজিক অব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি।’
এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ। এনসিপিকে নানা ভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’
গণসংহতি আন্দোলন জেনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকারকে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সচিবালয়কেন্দ্রীক আন্দোলন বন্ধ করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষ জাতীয় সনদের প্রত্যাশা করে।
৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা ও নির্বাচনের লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। জুলাই শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও তালিকা করা দরকার ছিল সরকারের। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসাথে চলতে হবে। ফ্যাসিবাদ রুখতে সকল দলগুলোর মধ্যে সংহতি থাকতে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ‘এনিসিপির বিষয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে সরকার। এমন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। পতিত সরকার আবারও বিশৃঙ্খলা করতে পারে। এ নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে সরকারকে।
সংস্কার কমিশনগুলো যেন কোনো দলকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে জনআকাঙ্খা নষ্ট না করে। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। জুলাইয়ের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। প্রতি মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসতে প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানানো হয়েছে।’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ মোকাবেলার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো দ্বিমত নেই। এই ঐক্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। নির্বাচনকে সামনে রেখে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানিয়েছে দলগুলো।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য আরও দৃশ্যমান করতে আহ্বান জানিয়েছেন। রাজনীতির মাঠে মত-দ্বিমত থাকবেই, পক্ষ-বিপক্ষ বক্তব্য থাকবেই, দলগুলোর থেকে সরকারকে জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দেশের মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দেখতে চায়। ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রশ্নে দলগুলোর মধ্যে হতাশা বা প্রশ্ন নাই। তারা প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।’
মন্তব্য করুন