প্রকাশিত: ২৪ মার্চ, ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

প্রশাসনের অবহেলায় ছাত্রাবাস নয়, যেন মরণফাঁদ

 

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

রাতের অন্ধকারে ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে, দেয়ালের ইট বেরিয়ে আসে, বৃষ্টির দিনে ঘরের ভেতর টপটপ করে পানি পড়ে, বারান্দার রেলিং দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা - যে ভবনে এভাবে বাস করতে হয়, সেটি কোনো পরিত্যক্ত দালান নয়- এটি রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের ' শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস' । শিক্ষার্থীদের মাথা গোঁজার এই একমাত্র ঠাঁই এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্রদের মাথা গোঁজার একমাত্র আশ্রয়স্থল ‘শহীদ শামসুল আলম ছাত্রাবাস’। তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এটি এখন এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ছাদ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা, দেয়ালের আস্তর উঠে ইট বের হয়ে গেছে, বারান্দার রেলিং ভেঙে পড়ার উপক্রম,  এমনই নাজুক অবস্থায় দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা।

ভবনটির জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ছাদ থেকে খসে পড়া ইট, দেয়ালের পলেস্তারা কিংবা বারান্দার রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে হতাহতের ঘটনা নতুন কিছু নয়। রবিবার (২৩ মার্চ) ছাত্রাবাসের ২০৮ নম্বর কক্ষে এক শিক্ষার্থীর বিছানায় ইট খসে পড়ে। তখন সে বিছানায় না থাকায় , কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি । কিন্তু এই ধরনের দুর্ঘটনা যে কোনো সময় বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে শঙ্কিত শিক্ষার্থীরা।

শতবর্ষী এই ভবনটি উনিশ শতকের শেষের দিকে নির্মিত বলে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগ থেকেই এটি ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এতদিনেও উল্লেখযোগ্য কোন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্ষার সময় ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে, তাই শিক্ষার্থীরা বিছানার ওপর প্লাস্টিকের পর্দা দিয়ে কোনোভাবে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করে। অন্যদিকে বারান্দার গ্রিল নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় সেটি রশি দিয়ে বেঁধে রাখছেন তারা।

শুধু জরাজীর্ণ ভবনই নয়, ছাত্রাবাসের জায়গাও নিরাপদ নয়। আশপাশের স্থানীয়রা ছাত্রাবাসের মাঠ প্রায় দখল করে নিয়েছে । বিভিন্ন সময় ছাত্রাবাস উচ্ছেদ করার জন্য দেয়ালে পোস্টারও লাগানো হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত এই জায়গাটুকুও ব্যবহার করতে গেলে নানা বাধার সম্মুখীন হয় ছাত্রাবাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা । শুধু তাই নয়, সন্ধ্যা হলেই ছাদের ওপর বসে মাদকসেবীদের আসর। ছাত্ররা মুখ খুলতে ভয় পায়, কারণ নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই। ছাত্রাবাসের সাদে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্বাস্থ্যঝুঁকির আরেক নাম এই ছাত্রাবাস।
শুধু কাঠামোগত দুরবস্থাই নয়, এখানকার পরিবেশও চরম অস্বাস্থ্যকর। রান্নাঘর বলতে স্যাতসেতে মেঝেতে চুলা বসানো। সেখানেই চলে খাবার তৈরির কাজ। অপরিষ্কার পানির কারণে প্রায়ই শিক্ষার্থীরা পেটের পীড়ায় ভোগে। নোংরা পরিবেশের কারণে পোকামাকড়ের উৎপাত নিত্যসঙ্গী। অনেকেই খাবারের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই তারা এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। বারবার সংস্কারের দাবি জানানো হলেও উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কলেজ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ভবনটি আজ ভগ্নদশায় পৌঁছেছে, যা শিক্ষার্থীদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই ছাত্রাবাস শুধু মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, এটি অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের স্থান। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ধুলোয় মিশে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষের অবহেলায়। শিক্ষার্থীরা দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারেন।
ভুক্তভোগী ২০৮ নম্বর রুমের শিক্ষার্থী মুন্না বলেন, বারবার  কলেজ প্রশাসনের নিকট ছাত্রবাস সংস্কারের দাবি জানানো হলেও, তারা উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। হলের প্রায় প্রত্যেকটি রুমের অবস্থায় নাজুক। শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকিতে রেখে কতদিন চলবে এই অব্যবস্থাপনা? কলেজ প্রশাসন কি কেবল বড় কোনো দুর্ঘটনার অপেক্ষায় রয়েছে? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপই পারে ছাত্রদের এই দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে।

এই বিষয়ে কলেজটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের কলেজের ছাত্রাবাস পুরোনো পরিত্যক্ত ভবন হওয়ায় সরকার থেকে কোন অনুদান আসে না। এটি হেরিটেজের অংশ হওয়ায় ভাঙাও সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্রাবাসটিতে শিক্ষার্থীরা জীবন ঝুঁকি নিয়েই অবস্থান করছেন। সরকার থেকে অনুদান না আসায়, কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকেই কিছু কিছু সংস্কার করা হয়েছে। তবে এর আগে একটা সংস্কার কমিটি গঠন করা হলেও, যিনি দায়িত্বে ছিলেন তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়, ফলে সংস্কার কাজ পিছিয়ে পড়ে। তবে,আমরা আবার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি।

মন্তব্য করুন