
প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বার, ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আনোয়ার হোসেন.নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রথম চালানে সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছে। পূজার আগেই পদ্মার ইলিশের পৌঁছে যাচ্ছে ভারতে। প্রতিকেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১২ দশমিক ৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৫৩৩ টাকা। প্রতিটি ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজির মধ্যে বলে তিনি জানান। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে সরকার ৩৭ জন রপ্তানিকারককে ১২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। প্রতি কেজি ইলিশের রপ্তানি মূল্য ১২ ডলার ৫০ সেন্ট। যা বাংলাদেশি টাকায় ১৫২৫ টাকা। ইলিশ রপ্তানি ভারতের সঙ্গে সৌহার্দ্য বাড়াবে বলছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৬ই সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত ১টার দিকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৮টি ট্রাকে এসব ইলিশ ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামীম হোসেন।
গত বছরে ২৪২০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রপ্তানি হয় এক হাজার ৩০৬ দশমিক ৮১৩ মেট্রিক টন ইলিশ। যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া রপ্তানি আদেশের ৪৪ ভাগ। অনেক প্রতিষ্ঠান মাছ না পেয়ে ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। এবারও মাছ সংকট ও অতিরিক্ত মূল্যের কারণে সব মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হবে না বলে জানান মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস ট্রেডার্স ।
এ বিষয়ে ভারতের ফিস্ ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ইলিশের পরিমানটা একটু বাড়বে। তবে বাংলাদেশেও ইলিশের উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। হয়ত সেই কারণেই ইলিশের পরিমাণ কম আসছে।
তিনি আরও বলেন, যাই হোক পূজার আগে ভারতের বাঙালি পদ্মার ইলিশের স্বাদ নিতে পারবে। এজন্য ওপার বাংলার মানুষ বাংলাদেশ সরকারের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। পদ্মার ইলিশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরার মাছ প্রেমীদের জন্য একটি সুস্বাদু খাবার।
বেনাপোল মৎস্য কোয়ারেন্টাইন অফিসার সজিব সাহা জানান, এবার আসন্ন দূর্গাপূজায় ৩৭টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এরই আলোকে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়েছে ১৬ ই সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৫ই অক্টোবরের মধ্যে অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে হবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১টার দিকে প্রথম চালানে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৬টি প্রতিষ্ঠান ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ ভারতে রপ্তানি করা হয়েছ।
বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টাইন অফিসার সজীব সাহা জানান, প্রথম চালানে ভারতে ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। মান পরীক্ষা করে রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারতের কলকাতার পাঁচটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রথম চালানের ইলিশ আমদানি করেছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ন্যাশনাল ট্রেডিং, এফএনএস ফিশ, জয় শান্তসী, মা ইন্টারন্যাশনাল ও আর জে ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশ থেকে ৬টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রথম চালানে ৩৭ টন ৪৬০ কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছে। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সততা ফিশ, স্বর্ণালী এন্টারপ্রাইজ, তানিশা এন্টারপ্রাইজ, বিশ্বাস ট্রেডার্স ও লাকী ট্রেডিং।
জানা যায়, ইলিশ রপ্তানি নিষিদ্ধ হলেও আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ভারতে মোট ১২০০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে এ রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন, ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ টন করে ৭৫০ টন, ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ টন করে ৩৬০ টন এবং দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০ টন করে ৪০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন বলেন, রাত ১২টার পরে ইলিশের ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। বন্দরের পক্ষ থেকে কাগজপত্র পরীক্ষা করে দ্রুত ছাড়করণে সহযোগিতা করা হয়। তবে ভারত অংশে দেরি হওয়ায় বেশি রাত হয়ে গেছে।
সাধারণ ক্রেতাগন বলেন, এক মাস আগেও দেশের বাজারে প্রতিকেজি ইলিশের দাম ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা হলেও এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। ভারতে যাচ্ছে ১৫০০ টাকা দরে আর দেশের মানুষ কিনতে গেলে দাম বেশি পড়ছে।
মন্তব্য করুন