প্রকাশিত: ৩ ঘন্টা আগে, ০৭:২৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

শেরপুরের  শ্রীবরদীতে পাকা ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা  কৃষক:

 

 

এজেএম আহছানুজ্জামান ফিরোজ,   শেরপুর  প্রতিনিধি :

 

শেরপুরের শ্রীবরদীতে আধা পাকা  বোরো ধান ক্ষেতে   কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। অনেকরই সম্পুর্ণ ধান ক্ষেত বিনষ্ট হয়েছে। কেউ কেউ ধান ক্ষেতে আগুন দিয়ে ধোয়া তৈরি করে পোকা দমনের চেষ্টা করছে। আধা   পাকা ধানে কারেন্ট পোকা ধরায় ফসল ঘরে তুলা নিয়ে শংকায় পড়েছে কৃষক। কিন্তু উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কোন খোঁজ নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে কৃষকরা। কৃষি বিভাগের এমন নিরবতায় তাদের কর্মকান্ড নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কৃষকরা। 

সোমবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোশাইপুর, রানীশিমুল সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে একরের পর একর জমিতে কারেন্ট পোকা আক্রমণ করেছে। কৃষকরা দোকান থেকে বিষ নিয়ে পাকা ধানে প্রতিদিনিই বিষ দিচ্ছে. কিন্তু পোকা দমন হচ্ছে না। এতে করে অনেক কৃষকই তাদের আবাদকৃত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শংকায় রয়েছে। ফসলের চিন্তুায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। কারণ ফসল ঘরে তুলতে না পারলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হবে। 

গোশাইপূর ইউনিয়নের বাদেঘোনাপারা গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের ছেলে কৃষক আসকর আলী বলেন, আমার ১ একর জমিতে কারেন্ট (সুলসুলি) পোকা আক্রমণ করেছে। প্রতিদিনই বিষ দিচ্ছি। কোন কাজ হচ্ছে না। লোকজনের পরামের্শ আক্রমণকৃত ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ধোয়া তৈরি করেছি। কিন্তু তবুও পোকা দমন হচ্ছে না। আজ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কোন লোকজন এসে আমাদের কোন পরামর্শ দেয়নি। তাহলে কৃষি বিভাগের কাজ কি? একই গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে কৃষক নজু মিয়া বলেন, আমার ২৫ শতাংশ ও আমার ভাই রিপন মিয়ার ৬৫ শতাংশ জমিতে কারেন্ট (সুলসুলি) পোকা আক্রমণ করেছে। বিষ দিতেছি, কিন্তু দমন হচ্ছে না। কৃষি অফিসের লোকজন আসেও না, কোন পরামর্শও দেয় না। 

এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন কৃষক আব্দুল কাদের। কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ৪০ শতাংশ জমির ধান সুলসুলি পোকাতো খাইয়ে ফেলেছে। দুঃখের বিষয় খেত দেখলে কান্দন (কান্না) আসে। অফিস থেকে কোন লোকজন আসে না। কেবল মাত্র ধান বের হইছে, তাই কাটতেও পারতেছি না। আব্দুল হাকিমের ছেলে কৃষক বাবুল বলেন, আমার এক একর জমিতে সুলসুলি পোকা ধরেছে। কৃষি অফিসের লোকজন কখনই আসে না। এসময় সাংবাদিকদের বলেন,  আপনারা যদি কোন সহযোগিতা করতে পারেন তাহলে আমাদের উপকার হবে। একই গ্রামের কৃষাণি কামরুন্নাহার বলেন, বন্যা, শিলা বৃষ্টিতে বিভিন্ন সময় আমাদের ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কিন্তু কৃষি বিভাগ থেকে কোন সহযোগিতা ও প্রণোদনা পাইনি। 

রানীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা আসান্দিপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সুলসুলির আক্রমণে আমার ২৫ শতাংশ জমির ধানখেত পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছে। আমি গরীব মানুষ। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেছি। ধান নষ্ট হওয়ায় জমির মালিককে কি দিবো, আর আমি কি খাবো? এছাড়াও বাদেঘোনা পারা গ্রামের জাহাঙ্গীর, টেঙ্গরপাাড়া গ্রামের শামীম, বিল্লাল হোসেন, আসান্দিপাড়া গ্রামের মঞ্জুরুল, শাহা  আলম সহ অনেক কৃষকের ধান ক্ষেত কারেন্ট পোকার আক্রমণে  ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে করে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাত কাটাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ছাড়াও মাজরা পোকার আক্রমণে ধান গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে এবং মরা শীষ বের হচ্ছে। এতে করে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। 

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবরিনা আফরিন বলেন, কিছু কিছু জায়গায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ হয়েছে। আমাদের উপসহকারি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছে। কৃষকরা অভিযোগ করে বলছে কৃষি বিভাগের কোন লোকজন এসে কোন পরামর্শ দেয়না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের উপ-সহকারিদের উপর নির্দেশনা রয়েছে ছুটির দিন সহ মাঠে থেকে পরামর্শ দেওয়ার। এছাড়া আমরাও মাঠে যাচ্ছি।

 

মন্তব্য করুন