প্রকাশিত: ১৬ ঘন্টা আগে, ১১:২১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

জাজিরায় যুবকের হাত-পা ভেঙে দুই চোখ খুঁচিয়ে নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক যুবককে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি দুই চোখ খুঁচিয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

 শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার মোহর আলী শিকদার কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী রমজান মোল্লাকে (৩৮) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।

আহত রমজান মোল্লা জাজিরা পৌরসভার দক্ষিণ বাইকশা এলাকার শফি মোল্লার ছেলে। মোহর আলী শিকদার কান্দি গ্রামের সুমন শিকদারের নেতৃত্বে তার সহযোগীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ। 

এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা সুমনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে তিনটি বসতঘর ও দুটি দোকান পুড়ে গেছে।

জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্র জানায়, অভিযুক্ত সুমন শিকদার এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মাদক, চুরিসহ অন্তত ২০টি মামলা আছে। 

আজ দুপুরে সুমনের বাড়ির পাশে একটি বাগানে রমজান মোল্লাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি দুটি চোখ ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে অন্ধ করে দেওয়া হয়। 

এলাকাবাসী খবর পেয়ে সুমন ও তাঁর সহযোগীদের তাড়া করেন। তাঁরা শাজাহান নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দেন এবং ভুক্তভোগী রমজানকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তানভির আহমেদ বলেন, ওই ব্যক্তির দুটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তিনি আর দেখতে পাবেন না। তার দুটি হাত ও ডান পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

 তাঁরা প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা সংঘবদ্ধ হয়ে অভিযুক্ত সুমন শিকদারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত আগুনে তাঁর তিনটি বসতঘর ও দুটি দোকান পুড়ে যায়। 

আগুন নিয়ন্ত্রণে জাজিরা থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। হামলার সময় সুমন শিকদারের বাড়ির লোকজন পালিয়ে যান। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে বাধা দেন এলাকাবাসী। 

পরে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে বেলা তিনটার দিকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

জাজিরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জাফর শেখ বলেন, একটি বাড়িতে আগুন লাগার খবর পেয়ে দুপুরের দিকে তাঁরা ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু উত্তেজিত জনতা আগুন নেভানোর কাজ করতে দেননি। 

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে বেলা তিনটা থেকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা হয়নি।

সুমনের প্রতিবেশী লিটন ব্যাপারী বলেন, ‘আমি জাজিরা উপজেলা সদরে কর্মস্থলে ছিলাম। বাড়ির লোকজনের কাছে খবর পেয়ে ছুটে যাই। এসে দেখি শত শত লোক সুমনের বাড়ি ঘিরে রেখেছে। বাড়ির তিনটি ঘর ও দুটি দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। 

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’ এলাকার লোকজনের কাছে শুনেছেন, সুমনের নেতৃত্বে জাজিরার এক ব্যক্তির হাত-পা ভেঙে দিয়ে চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এলাকার মানুষ তাঁর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন।

আহত রমজানের শ্বশুর তোতা মিয়া শেখ বলেন, ‘আমার জামাতা মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে আমাদের গ্রামেই বসবাস করেন। গতকাল আটরশি দরবার শরিফে যাওয়ার কথা বলে সে বাড়ি থেকে বের হয়। আজ দুপুরে আমরা জানতে পারি, তার হাত- পা ভেঙে দিয়ে চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

 আমরা লোকমুখে শুনেছি, সুমন শিকদার নামের একজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আমার জামাতার কী শত্রুতা আছে, আমরা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ বলেন, সুমন শিকদারের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবকের চোখ নষ্ট করে দিয়েছেন ও হাত-পা ভেঙে দিয়েছেন—এমন অভিযোগে স্থানীয় লোকজন সুমনের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। সুমন মাদকসহ বিভিন্ন মামলার আসামি।

 তাঁর বিরুদ্ধে ২০টি মামলা থাকার তথ্য পেয়েছেন। তবে পুরোপুরি যাচাই করতে পারেননি। যুবকের চোখ উপড়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার সময় জনতা একজনকে আটক করেছে। তাঁকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।

 তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হলে আদালতে পাঠানো হবে। পুলিশ পুরো ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে।

মন্তব্য করুন