
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
জুয়েল রানা নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
এক সময়ের চেনা শব্দ—ঢেঁকির “ঢপ ঢপ” আওয়াজে ভোর হতো গ্রামের দিন। বিশেষ করে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে ঢেঁকি ছিল যেন প্রতিটি বাড়ির অপরিহার্য অংশ। ধান ভানা, চাল তৈরি ও মসুর ডাল কোটা—সবই হতো এই কাঠের তৈরি যন্ত্রে। কিন্তু প্রযুক্তির তীব্র আগ্রাসনে আজ ঢেঁকি হারিয়ে যেতে বসেছে। নাগরপুরে এখন ঢেঁকির দেখা মেলা যেন ভাগ্যের ব্যাপার।
ঢেঁকি শুধু একটি যন্ত্র ছিল না, ছিল গ্রামীণ নারীদের শ্রম, ভালোবাসা ও পারিবারিক জীবনের অংশ। পরিবারের মেয়েরা একসাথে বসে ঢেঁকি চালাতেন, গল্প করতেন, হাসতেন—এ যেন এক ধরণের সামাজিক মিলনমেলা ছিল। খাঁটি চাল, ভাঙ্গা ডাল—সবকিছুতেই ছিল ঢেঁকির ছোঁয়া।
নাগরপুরের বয়স্ক নারী হালিমা খাতুন বলেন, আগে সকালে ঢেঁকির শব্দ না শুনলে মনে হইতো ঘুম ঠিকমতো ভাঙছে না। এখন তো শুধু টিভিতেই ঢেঁকি দেখা যায়।
বর্তমানে আধুনিক ধান ভাঙ্গার মেশিন সহজলভ্য। মেশিনে ধান ভাঙ্গা যেমন সহজ, তেমনি সময়ও কম লাগে। ফলে শ্রমনির্ভর ঢেঁকির ব্যবহার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। নতুন প্রজন্ম তো অনেকেই জানেই না ঢেঁকি কেমন দেখতে।
নাগরপুরের তরুণ রাহুল হাসান বলেন, আমার দাদির মুখে ঢেঁকির গল্প শুনেছি, কিন্তু বাস্তবে কখনও দেখি নাই। এখনকার মেশিনে সব কাজ হয়।
ঢেঁকি শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি ছিল গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতির অংশ। অথচ এই ঐতিহ্য রক্ষায় নেই কোনো সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ। স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠকরা বলছেন, ঢেঁকি সংরক্ষণের জন্য বিদ্যালয়ে প্রদর্শনী, মেলায় ঢেঁকি চালানোর প্রতিযোগিতা কিংবা স্থানীয় যাদুঘরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
সাংস্কৃতিবিদরা বলেন, আমরা যদি নিজের ঐতিহ্যকে মূল্য না দিই, তাহলে একদিন হয়তো আমাদের সন্তানেরা শুধুই বইয়ে এসবের কথা পড়বে।
নাগরপুরসহ দেশের নানা গ্রামে ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। এটি কেবল একটি যন্ত্র নয়, আমাদের শিকড়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা একটি স্মৃতি, একটি ইতিহাস। সেই ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। সময় থাকতে ঐতিহ্যের এই ধ্বংস ঠেকাতে না পারলে আগামী প্রজন্ম পাবে না তাদের শিকড়ের স্বাদ।
মন্তব্য করুন